• ত্রিপল বিলি ঘিরে তৃণমূল-বিজেপি বচসা, উত্তেজনা খানাকুলে
    বর্তমান | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, খানাকুল: মঙ্গলবার দুপুরে ত্রাণের ত্রিপল বিলিকে কেন্দ্র করে খানাকুলের রামনগরে প্রকাশ্য রাস্তায় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে বচসা বাধে। দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুক্ষণ ধরে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। তাতে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে খানাকুল থানার পুলিস গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিজেপি পরিচালিত খানাকুল-২ পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ তৃণমূলের সদস্যকে ত্রিপল দেয়নি বলে অভিযোগ। পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে বন্যা দুর্গতদের নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। তৃণমূলের খানাকুল-২ অঞ্চল সভাপতি রওশন আলি মল্লিক ওরফে লাল বলেন, আমাদের নবাসন গ্রামে এবার বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। অথচ পঞ্চায়েত থেকে আমাদের গ্রামের জন্য বরাদ্দ হওয়া ত্রিপল দেওয়া হয়নি। তাই এদিন দুর্গতরা ত্রিপল চাইতে পঞ্চায়েতে গিয়েছিলেন। সেখানে বিজেপির লোকেরা ঝামেলা করে। বিজেপির পঞ্চায়েত প্রধান সরস্বতী দাস বলেন, পঞ্চায়েতের তরফে কোনওরকম দলাদলি করা হয়নি। তৃণমূলের বাকি সদস্যদের ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই গ্রামের সদস্য আসেননি বলে ত্রিপল দেওয়া যায়নি। পাল্টা রওশন আলি মল্লিক বলেন, এক মানুষ সমান জল জমেছিল গ্রামে। জল কিছুটা কমায় সোমবার পঞ্চায়েতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দেয়।


    মঙ্গলবার খানাকুলের উঁচু জায়গাগুলি থেকে অনেকটাই জল নেমেছে। কিন্তু নিচু এলাকাগুলির অনেক জায়গাতেই জল জমে রয়েছে। তাছাড়া সমগ্র খানাকুলজুড়ে বন্যার পচা জলের দুর্গন্ধ। ফলে সেখানকার বাসিন্দারা দুর্ভোগের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন। কিছু এলাকায় জল নামলেও এখনও অনেক দুর্গতই রাতে থাকছেন প্রাইমারি স্কুলের ত্রাণ শিবিরে। সেখানেই পুলিসের উদ্যোগে কমিউনিটি কিচেনে তাঁরা খাচ্ছেন। এদিন দুপুরে বীরলোক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছিলেন প্রতিমা দাস। তিনি বলেন, এবার বন্যার তীব্রতা অনেক বেশি ছিল। আমাদের এলাকা এভাবে আগে কখনও ডোবেনি। আমার ঘর ভেঙেছে। ত্রিপল খাটিয়ে কোনওভাবে সামগ্রীগুলি বাড়িতে রেখেছি। কিন্তু রাতে ঘুমোতে আসি প্রাইমারি স্কুলে। আমার মতো পাঁচটি পরিবার এখানেই থাকে। 


    জগৎপুরের বাসিন্দা ৭০বছরের জলধর মান্নার বাঁ হাত গত রবিবার ভেঙে যায়। প্রচণ্ড যন্ত্রণা। ওষুধ খেয়ে কোনওভাবে কাটিয়েছিলেন। এদিন তিনি বাড়ি থেকে নৌকায় চেপে নন্দনপুরে আসেন। সেখান থেকে ভীমতলায় গিয়ে হাতের প্লাস্টার করিয়েছেন। জলধরবাবু বলেন, বন্যার জন্য সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তাই একদিন পর নৌকায় করে ডাক্তারখানায় গিয়ে হাত প্লাস্টার করলাম। খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে। 


    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরীর জলস্তর প্রাথমিক বিপদ সীমার নীচে নেমে গিয়েছে। কিন্তু রূপনারায়ণ নদের জল বিপদ সীমা ছুঁইছুঁই অবস্থায় রয়েছে। খানাকুলের বন্দরে রূপনারায়ণ নদের জলস্তর বিকেল ৩টে পর্যন্ত ছিল ৬.৬৮ মিটার। বিপদ সীমা ৬.৮৫ মিটার। এছাড়া দামোদর চাপাডাঙায় ১০.৬০ ও মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলস্তর হরিণখোলায় ছিল ১০.২০মিটারে। এখনও পর্যন্ত খানাকুল ১ব্লকে ১৫টি ত্রাণ শিবির চলছে। সেখানে প্রায় ১৫০০ দুর্গত রয়েছেন। খানাকুল-২ ব্লকে ৩০টি শিবিরে প্রায় ১২০০ দুর্গত রয়েছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)