• পুজোর অনুদান না নিলে বাকি সুবিধে বন্ধ?
    এই সময় | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: দুর্গাপুজোর সরকারি অনুদান প্রত্যাখান করলে মিলবে না বাকি সরকারি সুবিধে— থানায় ডেকে বিধাননগর কমিশনারেট এমনটাই জানাতে শুরু করেছে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের একাংশের। এ কথা কানে যেতেই সল্টলেকের যে সব পুজোর উদ্যোক্তা আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে অনুদান ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁরা নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন। কারণ পুজোর জন্য এককালীন ৮৫ হাজার টাকা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি সুবিধে দিয়ে থাকে সরকার।এর মধ্যে রয়েছে পুরকর, দমকলের লাইসেন্স এবং বিদ্যুৎ বিলে ছাড়। এই তিন খাতে ৮০ থেকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় মেলে। যদিও বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘এ রকম কোনও কথা আমাদের কোনও অফিসার বলেছেন বলে আমার জানা নেই। আমাদের দায়িত্ব পুজোর অনুদানের চেক বিলি করা।’

    সল্টলেকের যে ক’টি পুজোর কমিটি সরকারি অনুদান নেবে না বলে ঠিক করেছিল, তার মধ্যে অন্যতম সি-এ, বি-সি, বি-এল, আই-এ ব্লক। অভিযোগ, বি-এল ব্লকের অনুদান প্রত্যাখানের বিষয়টি জানার পরেই বিধাননগর দক্ষিণ থানার পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে দুর্গাপুজোর অনুদান স্বরূপ ৮৫ হাজার টাকা না নিলে বাকি সুবিধে মিলবে না। এই পরিস্থিতিতে পুজো কমিটির কর্মকর্তারা বাসিন্দাদের সঙ্গে ফের আলোচনা করছেন বলে দাবি। বি-সি বা সি-এ ব্লকও অনুদান না-নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে স্থানীয় থানায়।

    তবে, এখনও পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। বি-সি ব্লক পুজো কমিটির সম্পাদক সম্রাট পাল বলেন, ‘৮৫ হাজার টাকা ফেরানোর জন্য বিদ্যুৎ বিল, পুরকর, ফায়ার লাইসেন্সে ছাড় মিলবে না, এ কথা এখনও আমাদের বলা হয়নি।’ একই বক্তব্য সল্টলেকের সি-এ ব্লকের কর্মকর্তাদের।

    সল্টলেকের আই-এ ব্লকও বাসিন্দাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিধাননগর কমিশনারেটকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে ছোট আকারেই পুজো হবে। সরকারি অনুদানের অর্থ এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এবং মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন উদ্যোক্তারা। তবে সেটা সম্ভব নয় বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। তা ছাড়া, ৮৫ হাজার টাকা প্রত্যাখান করলে বাকি সরকারি সুবিধে মিলবে না, এই আশঙ্কা থেকে নতুন করে সরকারি অনুদানের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরুর দাবি তুলেছেন ব্লকের বেশ কিছু বাসিন্দা।

    এই আবহেই তৃণমূল পরিচালিত পুরুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান নবেন্দু মাহালির একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। শনিবার পুরুলিয়া রবীন্দ্র ভবনে লোকশিল্পীদের সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে ডেপুটেশন হবে, আন্দোলন হবে, কুশপুতুল দাহ হবে। আর সেই কর্মসূচিতে থাকবেন শিল্পীরা, যাঁরা সরকারের ভাতা প্রাপক! এটা মানানসই? এটা কি করা যায়? যে মঞ্চে সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা হচ্ছে, সেই মঞ্চে তুমি থাকবে? দু’নৌকোয় পা দিয়ে চলা যায় না।’

    তাঁর সংযোজন, ‘শিল্পীর মুখোশ পরে গাছের খাবে, তলারও কুড়োবে, তা চলবে না। যার নুন খাই, তার গুণও গাইতে হবে।’ জেলা বিজেপি সভাপতি বিবেক রাঙ্গার বক্তব্য, ‘শিল্পীদের ভাতা তাঁদের অধিকার। তার জন্য কোনও সরকারের তাঁবেদার হওয়ার দরকার নেই।’ জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘উনি ব্যক্তিগত ভাবে বলেছেন। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। মুখ্যমন্ত্রী সব লোকশিল্পীকেই সুবিধা দিচ্ছেন। উনি কোনও রাজনৈতিক ভেদাভেদ করেন না।’

    যদিও নবেন্দু বলে দিয়েছেন, ‘যা বলেছি, তা ভেবেচিন্তেই বলেছি।’ আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। কলকাতা পুলিশের তৎকালীন কমিশনারের বিনীত গোয়েলের কাছে প্রতীকী শিরদাঁড়া নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেই প্রতীকী শিরদাঁড়া রাখা হয়েছিল বেলেঘাটার একটি পুজো প্যান্ডেলের সামনে। তবে এ দিন সেই শিরদাঁড়া চলে গিয়েছে ক্লাবের পিছনে।

    অভিযোগ, রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের একাংশের চাপে এই পরিবর্তন। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ক্যালচারাল সেক্রেটারি প্রসেনজিৎ দে— ‘আমাদের থিম তৈরি হয়েছিল জানুয়ারিতে। সেই অনুযায়ী মণ্ডপের পরিকল্পনা শুরু হয়। একজন বাবার মজবুত শিরদাঁড়া আর বিরাট হৃদয় সংসারকে ধরে রাখে, সেটাই দেখানোর পরিকল্পনা ছিল। সে কারণেই মণ্ডপে শিরদাঁড়ার পাশাপাশি হৃদপিণ্ডও ছিল। বিতর্কের কারণেই অনেক কিছু সরানো হয়েছে। সে জন্য মণ্ডপের ক্ষতিই হলো।’
  • Link to this news (এই সময়)