মেয়ের আশায় মায়ের আরাধনা পুরুলিয়ায়! মহিষাসুরমর্দিনী নয়, দেবী দুর্গা এখানে মাতৃরূপেণ
প্রতিদিন | ০১ অক্টোবর ২০২৪
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কন্যা সন্তানের আশায় শুরু হওয়া পুজোয় মায়ের রূপ মহিষাসুরমর্দিনী নয়। মায়ের কোলে রয়েছে গণেশ। তার দুপাশে রয়েছে সিংহ ও ষাঁড়। এভাবেই পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের আড়রা গ্রামে পুজো পেয়ে আসছেন মা দুর্গা।
এই এলাকার রাজারাম মিশ্র নামে এক জমিদার বংশে কোনও কন্যাসন্তান ছিল না। তাই কন্যাসন্তানের আশায় বেনারসের অন্নপূর্ণা মন্দিরে পুজো দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন পঞ্চকোট রাজ পরিবারের এই জমিদার। কিন্তু শেষমেশ বেনারসের ওই মন্দিরে যেতে হয়নি। জনশ্রুতি, ওই জমিদার একদিন নিজের পুকুরে স্নান সেরে বাড়িতে প্রবেশ করছিলেন, সেইসময় পুকুর পাড়ে লাল পাড় সাদা শাড়িতে থাকা এক ফুটফুটে কিশোরীকে দেখতে পান। ওই কিশোরী বলে ওঠে, এখানেই দুর্গাপূজার সূচনা করলে কন্যাসন্তান মিলবে। তার পর পুজো শুরুর ৫ বছরের মধ্যেই ওই জমিদার বংশে কন্যাসন্তান হয়।
প্রাচীন এই পুজোয় আড়ম্বর না থাকলেও ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে মায়ের আরাধনাকে ঘিরে উৎসবে মাতেন এলাকার মানুষজন। বৈষ্ণবী বৃহৎ নান্দীকেশ্বর মতে এই পুজোয় হয় চালকুমড়ো, ইক্ষু, শশা ও কলা বলি। বর্তমানে এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রদীপ মিশ্র বলেন, “এবারের পুজো ৩২৭ বছরে পড়েছে। এই পুজো করার জন্য পঞ্চকোট রাজার কাছ থেকে ৬২ বিঘা জমি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন তো আর সেইসব জমিজমা নেই। আমরা নিজেরাই কোনওভাবে পুজো করি।”
ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গড় পঞ্চকোটে এই রাজপরিবারের রাজধানী থাকার সময় রাজা গরুড় নারায়ণ সিং দেও (বলভদ্রশেখর সিং দেও) পুজোর জন্য ওই পরিবারকে ৬২ বিঘা জমি দান করেছিলেন। তখন চালার ঘরে পুজো হতো। এখন অবশ্য মন্দির হয়েছে। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে প্রতিমা তৈরিতে সমস্যা হয়। তাই মহালয়ার আগে জোরকদমে চলছে মাতৃপ্রতিমা তৈরির কাজ।