• তন্ত্রসাধনার নামে শিশুকন্যাকে ধর্ষণ-বলি, তান্ত্রিকের ফাঁসি, দিদিমার যাবজ্জীবন
    বর্তমান | ০২ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: তন্ত্র সাধনায় সিদ্ধিলাভে প্রয়োজন ছিল নরবলির। সেই কারণেই তান্ত্রিক দম্পতির হাতে সাড়ে চার বছরের নাতনিকে তুলে দিয়েছিল দিদিমা। সেই শিশুকন্যাকে খুনের পর হাত-পা, মুখ বেঁধে দেহ লুকিয়ে রাখা হয় সেপ্টিক ট্যাঙ্কে। ২০১৮ সালে হুগলি জেলার খানাকুল থানা এলাকায় ঘটেছিল হাড়হিম করা এই খুনের ঘটনা। সেই মামলায় মঙ্গলবার দোষীদের ফাঁসির সাজা দিল আরামবাগের পকসো ও অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন কোর্ট। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীনই মৃত্যু হয়েছে অভিযুক্ত ওই তান্ত্রিকের। তার স্ত্রীকে এদিন ফাঁসির সাজা দিয়েছেন বিচারক কিষেনকুমার আগরওয়াল। রেহাই পায়নি শিশুকন্যার দিদিমাও। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি দিয়েছে আদালত।


    মামলার সরকারি আইনজীবী ছিলেন শেখ আমির হোসেন। সহযোগী হিসেবে ছিলেন বিকাশ রায় ও অনুপ কুমার দে। তাঁরা বলেন, তন্ত্র সাধনায় সিদ্ধিলাভের আশায় একরত্তি শিশুকন্যাকে নৃশংসভাবে খুন করে অভিযুক্তরা। খুনের আগে শিশুটির উপর যৌন নির্যাতনও চালায় তান্ত্রিক মুরারি পণ্ডিত। যদিও মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন বর্ধমান সংশোধনাগারে তার মৃত্যু হয়। তাই খুন, অপহরণ ও প্রমাণ লোপাটের দায়ে তান্ত্রিকের স্ত্রী সাগরিকা পণ্ডিতকে ফাঁসির সাজা দিয়েছেন মহামান্য বিচারক। শিশুর বাবা, মা বাড়িতে না থাকার সুযোগ নিয়েছিল দিদিমা। নাতনিকে অপহরণ করে সে-ই তুলে দেয় ওই তান্ত্রিকের হাতে। তাই তারও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুই আসামিকে অন্যান্য ধারা অনুযায়ী ১৫ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। জরিমানার টাকা শিশুর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ বাবদ পরিবারের হাতে তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারকে। 


    আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় ওই শিশুকন্যা। পরদিন খানাকুল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তার বাবা। ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামেই এক ব্যক্তির বাড়িতে নির্মীয়মাণ সেপ্টিক ট্যাঙ্ক থেকে শিশুকন্যার পচা গলা দেহ উদ্ধার করে পুলিস। ঘটনার তদন্তে নেমে গ্রেপ্তার করা হয় তান্ত্রিক দম্পতিকে। পরে গেফাজতে নেওয়া হয় শিশুকন্যার দিদিমাকেও। সেও তন্ত্র সাধনার কাজে যুক্ত ছিল। সিদ্ধিলাভের পরামর্শে নাতনিকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে সে। পুলিসের জেরায় তারা ঘটনার কথা স্বীকারও করে নেয়। সেইমতো মামলার চার্জশিট জমা দেয় পুলিস। তান্ত্রিকের গোয়াল ঘর থেকে রক্ত মাখা মাটি, ধুপ, ধুনো, সিঁদুর লাগানো বেল পাতা, শুকনো সাদা ফুল, সেন্টের খালি বোতল প্রভৃতি সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এছাড়া উদ্ধার হয় শিশুকন্যার জুতোও।


    সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, শিশু কন্যার দেহের ময়নাতদন্ত হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। সেখানে খুনের পাশাপাশি যৌন নির্যাতনের প্রমানও পাওয়া যায়। এছাড়া ডাক্তার, তদন্তকারী অফিসার সহ ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সব দিক বিচার করে আদালত এই দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)