এক বছর ধরে ভয় দেখিয়ে লাভ না হওয়ায় সন্দীপই কষেন খুনের ছক: রিপোর্ট
হিন্দুস্তান টাইমস | ০৪ অক্টোবর ২০২৪
আর জি কর কাণ্ডের তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছেন সিবিআই গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুন মোটেই কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। বরং, তা এক নিখুঁত ও দীর্ঘ পরিকল্পনারই চূড়ান্ত পরিণতি! যার নেপথ্যে রয়েছে সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে নিহত চিকিৎসকদের গত প্রায় এক বছরের বিবাদ ও দ্বন্দ্ব!
বর্তমান পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, হাসপাতালের একাধিক অনিয়ম ও অন্য়ায়ের প্রতিবাদ করেই প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের 'চোখের বালি' হয়েছিলেন ওই তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়া। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতে, সন্দীপের সঙ্গে এই বিবাদের কারণেই নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে তাঁকে।
বর্তমান পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, আর জি কর হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যে যে ওষুধ দেওয়া হত, তা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। এ নিয়ে বেশ কিছু সিনিয়র চিকিৎসককে সরাসরি অভিযোগ করেন ওই তরুণী।
ঘটনাচক্রে ওই সিনিয়র চিকিৎসকরা সকলেই ছিলেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের 'কাছের লোক'। ফলত, এক তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়া যে নিম্নমানের ওষুধের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন, সেই খবর সন্দীপের কানে পৌঁছতে বেশি সময় লাগেনি।
এছাড়াও, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের পঠনপাঠন নিয়েও একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসক।
অভিযোগ, কলেজে ঠিক মতো ক্লাস করানো হত না। মেধাবী চিকিৎসক পড়ুয়াদের গবেষণাপত্র সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ পড়ুয়া ও চিকিৎসকদের দিয়ে দিতে বাধ্য করা হত। এমনকী, নিহত তরুণীর গবেষণাপত্রও একইভাবে অন্য একজনকে দিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ।
তদন্তে প্রকাশ, নিহত তরুণী চিকিৎসকের গবেষণাপত্র যাঁকে দিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল, সেই ব্যক্তি নাকি 'সন্দীপ ঘোষের ডানহাত' ছিলেন। হাসপাতালের পিজিটি পড়ুয়াদের কাছ থেকে এই তথ্য জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
এইসব নানা কারণেই নিহত ওই তরুণী ক্রমশ সন্দীপ ঘোষের কাছে বিপদ হয়ে উঠেছিলেন। তরুণীর মুখ বন্ধ রাখতে মরিয়া ছিলেন সন্দীপ। এমনকী, ওই তরুণীকে যে যেকোনও মূল্যে আটকাতেই হবে, সেকথাও সন্দীপ তাঁর 'বিশ্বস্ত' চিকিৎসকদের বলেছিলেন বলে তদন্তে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
অভিযোগ, এ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে এড়িয়ে যান সন্দীপ ঘোষ। কিন্তু, পুরনো ডিজিট্যাল নথি ঘেঁটে সন্দীপের পাঠানো এই সংক্রান্ত 'মেসেজ' উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা।
এরপর আবারও সন্দীপকে এই প্রসঙ্গে জেরা করা হলে তিনি নিম্নমানের ওষুধ নিয়ে তরুণী চিকিৎসকের প্রতিবাদের বিষয়টি সিবিআই গোয়েন্দাদের কাছে মেনে নিতে বাধ্য হন।
সূত্রের দাবি, প্রাথমিকভাবে ওই তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়াকে নাকি 'বোঝানো' হয়েছিল, যাতে তিনি এইসব বিষয় নিয়ে খুব বেশি মাথা না ঘামান। কিন্তু, গোয়েন্দাদের হাতে আসা তথ্য বলছে, আসলে ওই তরুণীকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য লাগাতার ভয় দেখানো হচ্ছিল।
কিন্তু, কোনও কিছুর সামনেই মাথানত করতে রাজি ছিলেন না নিগৃহীতা। সেই কারণেই তাঁকে খুনের ছক কষা হয় বলে মনে করছেন সিবিআই গোয়েন্দারা।
বর্তমান পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, কী কারণে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করা হয়, তা জানতে আর জি করের একাধিক কর্মী ও চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা।
এই জিজ্ঞাসাবাদে সকলেই ইঙ্গিত দেন, যা ঘটেছে, তার মাস্টার মাইন্ড প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ! জিজ্ঞাসাবাদে এও উঠে এসেছে, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ নানা অনিয়ম ও অন্যায় জেনে ফেলায় এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাতেই এই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে!
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, ওই তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়াকে কোথায় এবং কীভাবে খুন করা হবে, তার ছক সন্দীপ ঘোষ ছাড়াও জানতেন আরও চারজন চিকিৎসক!
জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দারা আরও জানতে পেরেছেন, নিজের ঘনিষ্ট কয়েকজন চিকিৎসক-সহ আরও কয়েকজন ব্যক্তির মাধ্যমেই আর জি করে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের নিখুঁত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন ঘটান সন্দীপ ঘোষ!