বোধনের আগে গঙ্গায় ‘বিসর্জন’ বহু বাড়ি, সামশেরগঞ্জে কান্নার রোল
বর্তমান | ০৫ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর ও সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: দেবীর বোধনের আগেই যেন বিসর্জনের সুর সামশেরগঞ্জজুড়ে। শুক্রবার সকাল থেকেই ভয়াবহ ভাঙনে একের পর এক বাড়ি তলিয়ে গেল গঙ্গাগর্ভে। আরও কিছু বাড়ি নদীর কিনারায় ঝুলে। যে কোনও মুহূর্তে সেগুলিও তলিয়ে যাবে। চোখের সামনে বসতভিটে হারিয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছেন গ্রামবাসীরা। এদিন সকাল থেকে সামশেরগঞ্জের শিকদারপুর গ্রামে একে একে দশটি পাকা ও কাঁচা বাড়ি জলে পড়ে যায়। গঙ্গায় জলস্তর বৃদ্ধি হতেই গঙ্গার স্রোতে পাড় ভেঙে তলিয়ে যেতে থাকে পাকাপোক্ত বাড়িগুলি। নিমেষের মধ্যে গঙ্গা গিলে ফেলে গাছপালা সহ বিস্তীর্ণ জমিও। এলাকাজুড়ে আতঙ্ক। আশেপাশের আরও প্রায় শতাধিক পরিবার শেষ সম্বল টুকু নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছেন। বাসিন্দাদের দাবি, গত দু’দিন ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে গঙ্গার জল। সেই স্রোতের টানে ধসে পড়ছে নদীর পাড় ও সংলগ্ন ঘরবাড়ি। এদিকে, ভাঙন নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলছেন তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভাঙনের রোধের প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’
স্থানীয় বাসিন্দা সাকির শেখ বলেন, ‘সকাল থেকেই ভাঙন শুরু হয়েছে। একে একে সব বাড়িগুলি জলে তলিয়ে গেল। আমার বাড়িটিও নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। ছেলেপুলে নিয়ে কোনও ক্রমে বাইরে পালিয়ে এসেছি। কিছুই সরানোর সুযোগ পাইনি। কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছি না। কপালে যা রয়েছে তাই হবে।’ অপর এক গ্রামবাসী জাহিরুল হক বলেন, ‘দশটির বেশি বাড়ি নদীতে পড়ে গিয়েছে। মানুষের দুর্দশার অন্ত নেই। অথচ সরকারের কোনও হেলদোল নেই। নদীর পাড় বাঁধানোর কাজ আদতে কিছুই হচ্ছে না। ভাঙনের অর্থ তছরুপ হচ্ছে। এত বড় নদীতে পাড়ের ধারে কয়েকটি বালির বস্তা ফেলে কোনও লাভ হবে না।’
সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি, ভাঙন সামশেরগঞ্জবাসীর যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই কোনও না কোনও এলাকায় ভাঙন হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দুর্দশা দেখা যাচ্ছে না। মানুষ বড় অসহায় হয়ে পড়েছে। আমরা সাধ্যমতো ভুক্তভোগী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। কেন্দ্র সরকার ভাঙন রোধের কোনও কাজ করছে না। কেন্দ্রকে বলব সামশেরগঞ্জবাসীকে বাঁচান।’
অপরদিকে, জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক জাকির হোসেন তাঁর জঙ্গিপুরের বাসভবনে সাংবাদিকদের সামনে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘ভাঙন রোধের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রায় দেড়শ কোটি টাকা দিলেও সেই টাকা সঠিকভাবে ব্যায় হয়নি। ভাঙন রোধের কাজে দুর্নীতি হয়েছে। নইলে ভাঙন এত ভয়াবহ আকার ধারণ করত না। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত সরকারি আধিকারিক ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হোক। গঙ্গার ভাঙনকে আগেই জাতীয় সমস্যা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ভাঙন রোধের দায়িত্ব কেন্দ্র সরকারের। কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য উভয় সরকার মিলে এই ভাঙনের রোধের কাজ করুক। মানুষের এই কষ্ট আর দেখা যাচ্ছে না।’