মিসিং ডায়েরি: গড়িমসি রুখতে এবার কঠোর হচ্ছে রাজ্য পুলিস
বর্তমান | ০৭ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মিসিং ডায়েরি নেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি রোগ থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি রাজ্য পুলিস। এনিয়ে অভিযোগ এড়াতে শীর্ষকর্তাদের পাঠানো নির্দেশকে অনেকসময়ই পাত্তাই দিচ্ছে না থানাগুলি। নিজস্ব স্টাইলে কাজ করতে গিয়ে তারা প্রশাসনের বিপদ ডেকে আনছে। সেই সঙ্গে মুখ পুড়ছে সরকারের। জয়নগরের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। মিসিং ডায়েরি নিতে কোনও থানা অস্বীকার করলে এবার কড়া ব্যবস্থা নিতে উদ্যেগী হয়েছে প্রশাসন।
২০২২ সালে বাগুইআটি এলাকার দুই কিশোর নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় মিসিং ডায়েরি করতে গিয়ে হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছিল পরিবারকে। তাঁদের অভিযোগ ছিল নিখোঁজের অভিযোগ প্রথমে নেওয়া হয়নি। পরে তা গ্রহণ করলেও আপলোড করা হয়নি পোর্টালে। সমন্বয়ের অভাবে বেশ কয়েকদিন বসিরহাট পুলিস জেলার হাসপাতালের মর্গে তাঁদের দেহ পড়ে ছিল। এরপর নবান্ন নির্দেশ দেয়, সমস্ত থানাকে মিসিং ডায়েরি করার পর সিআইডির পোর্টলে আপলোড করবে, যাতে এক জেলার বিষয় অন্য জেলা জানতে পারে। কেউ মিসিং ডায়েরি করতে এলে তাকে না ফিরিয়ে তা লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন। নাবালকের ক্ষেত্রে এও বলা হয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে না ফিরলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো অপহরণের কেস রুজু করতে হবে।
নির্দেশ পাওয়ার পর কিছুদিন তা মানা হলেও বছর ঘুরতেই তাতে শিথিলতা আসতে শুরু করে। নাবালক-নাবালিকার মিসিং ডায়েরি নিয়ে জেলা পুলিসের থানাগুলিতে সেই পুরনো রোগ শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ অভিযোগকারীকে তারা বলতে শুরু করে, ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তার মধ্যে ফিরে না এলে জিডি করা হবে। কোনও কোনও থানায় কর্তব্যরত পুলিস কর্মীরা অভিযোগকারীকে এও বলতে শুরু করেন, আপনারা আগে ভালো করে খুঁজুন। এলাকার বিভিন্ন জায়গা বা আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানুন, সেসব জায়গায় গিয়েছে কি না। আর জিডি করা হলেও নিখোঁজ নাবালক-নাবলিকাদের খোঁজা বা তদন্তের ক্ষেত্রে থানার অফিসার গা লাগাচ্ছেন না বলে অভিযোগ ওঠে। নাম কা ওয়াস্তে কিছু জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়। এফআইআর করতে অনীহা দেখান থানার অফিসাররা। নিখোঁজ ব্যক্তির ছবিসহ বিবরণ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় না।
জয়নগরের ওই শিশুর পরিবার অভিযোগ করেছে, মিসিং ডায়েরি করতে গেলে তাঁদের ঘোরানো হয়েছে। থানার এই গাছাড়া মনোভাব মেনে নিতে রাজি নন পুলিসের শীর্ষকর্তারা। নিখোঁজের অভিযোগের যথাযথ তদন্তের পাশাপাশি সমস্ত পোর্টালে যাতে তা আপলোড করা যায়, তারও নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে বলে খবর।