পরিবারের সঙ্গে পুজো দেখতে হোমের কম ঝুঁকিপূর্ণ মেয়েদের বাড়ি ফেরানোর নির্দেশ
বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: স্মার্ট ফোনের জন্য বায়না করেছিল বিউটি বর্মন (নাম পরিবর্তিত)। বাবা-মা আপত্তি করায় রাগ করে বাড়ি ছাড়ে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিস। ঠাঁই হয় হোমে। অন্যদিকে, জলপাইগুড়ির ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না রায়কে (নাম পরিবর্তিত) বিয়ের টোপ দিয়ে বাড়ি থেকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যায় এক যুবক। মেয়েকে ফিরে পেতে পুলিসের দ্বারস্থ হয়েছিল পরিবার। পুলিসের হস্তক্ষেপে উদ্ধারের পর ওই কিশোরীরও ঠিকানা হয় হোম। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হোমে তাদের জন্য পড়াশোনা, হাতের কাজ, খেলাধুলো সবেরই ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তিস্তাপাড়ে কাশের বনে দোলা আর হোমের চার দেওয়ালের গণ্ডির বাইরে ঢাকের আওয়াজ কানে আসতেই উশখুশ করছিল মন। সব পেয়েও যেন না পাওয়া থেকে যাচ্ছিল কিছু একটা। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই এবার উদ্যোগী হল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার দপ্তর। পরিবারের সঙ্গেই যাতে ওইসব মেয়েরা পুজো দেখতে পারে, সেজন্য তাদের বাড়ি ফেরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ডিরেক্টরেটের তরফে। সেইমতো হোম থেকে বাড়ি ফেরানো শুরু হয়েছে কম ঝুঁকিপূর্ণ মেয়েদের।
জলপাইগুড়ির কিশোরীদের হোমের কো-অর্ডিনেটর দীপশ্রী রায় বলেন, ডিরেক্টরেটের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পকসো ছাড়া যেসব মেয়ের পরিবার রয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে পুজোয় বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেইমতো আমরা মেয়েদের ফেরাচ্ছি। গত কয়েকদিনে বেশকিছু মেয়েকে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মূলত যারা রাগ করে একসময় বাড়ি ছেড়েছিল কিংবা কারও সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, তাদেরকেই ফেরানো হচ্ছে। তবে যারা পুজোয় বাড়ি ফিরতে পারছে না, তারা যাতে কোনওভাবেই মন খারাপ না করে, তার ব্যবস্থা করেছে কিশোরীদের জন্য নির্দিষ্ট ওই হোম কর্তৃপক্ষ। হোমের কো-অর্ডিনেটর বলেন, আমরা ওদের নতুন পোশাক, জুতো কিনে দিয়েছি। সপ্তমীতে টোটোয় চাপিয়ে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাওয়া হবে। পুজোর ক’দিন ভালোমন্দ খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেয়েদের হোমের পাশাপাশি জলপাইগুড়িতে ছেলেদের হোমেও পুজো উপলক্ষ্যে থাকছে বিশেষ আয়োজন। সেখানে আবার পুজো হচ্ছে। হোমের ছেলেরাই প্রতিমা বানিয়েছে। মহিলা পুরোহিত দিয়ে পুজো হবে। ছেলেদের হোমের সুপার গৌতম দাস বলেন, সাত বছর ধরে হোমে পুজো হচ্ছে। তবে এবারই ছেলেরা প্রতিমা বানাল। পুজো উপলক্ষ্যে জলপাইগুড়ির প্রশাসনিক আধিকারিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাঁরা আসবেন বলে কথা দিয়েছেন।