শারদোৎসবের মধ্যেই এক ভয়াবহ ও মর্মন্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে হল জলপাইগুড়ি জেলার ওল্ড পুলিশ লাইন এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, এলাকারই বাসিন্দা এক তরুণী মাকে কুপিয়ে, তারপর গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন!
ঘটনার সূত্রপাত সপ্তমীর রাতে। জলপাইগুড়ি ওল্ড পুলিশ লাইনের বাসিন্দা রায় পরিবারের মেয়ে তুহিনা রায় সপ্তমীতে বেরিয়েছিলেন ঠাকুর দেখতে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, ঠাকুর দেখে বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যায় তুহিনার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বয়ান অনুসারে, রাত প্রায় বারোটার পর বাড়ি ফেরেন তুহিনা। এতে তাঁর মা রীনা রায় মেয়ের উপর অত্যন্ত রেগে যান। কেন বাড়ি ফিরতে দেরি হল, তা মেয়ের কাছে জানতে চান তিনি।
সূত্রের দাবি, মায়ের এই প্রশ্ন ভালো লাগেনি তুহিনার। ফলে মায়ের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয় তাঁর। এতে রীনা মেয়ের উপর আরও রেগে যান। রাগের বশে মেয়ের গালে থাপ্পড় মারেন তিনি।
অভিযোগ, এরপরই নাকি তুহিনা প্রচণ্ড রাগে পালটা মায়ের উপরেই ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাড়িতে যে বঁটি রান্নার কাজে ব্যবহার করা হত, সেই বঁটি দিয়েই মাকে কোপাতে শুরু করেন তিনি! এর ফলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যান রীনা। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন মেঝেয়।
সূত্রের দাবি, মায়ের এই অবস্থা দেখে সম্ভবত ভয় পেয়ে যান তুহিনা। কিন্তু, মাকে সাহায্য করার বদলে আরও ভয়ঙ্কর কাজ করে বসেন তিনি। মাকে ফেলে রেখেই নিজের গায়ে আগুন দেন ওই তরুণী!
পরবর্তীতে মা ও মেয়ে, দু'জনকেই উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় তুহিনার। তাঁর মাকে যদিও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানেই আপাতত চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
এমন ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তবে, প্রতিবেশীরা যতটা মানসিকভাবে আহত হয়েছেন, তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছেন। সামান্য ঠাকুর দেখা এবং দেরি করে বাড়ি ফেরা নিয়ে যে এত বড় একটি অঘটন ঘটে যেতে পারে, এমনটা যেন কারও বিশ্বাসই হতে চাইছে না।
অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তুহিনার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তুহিনার মা রীনা রায় কিছুটা সুস্থ হলে তাঁর বয়ান নেবে পুলিশ।
প্রতিবেশীরা মনে করছেন, কী কারণে সামান্য একটি বিষয় নিয়ে বচসা এত দূর গড়াল, কেনই বা তুহিনা এত রেগে গেলেন, কেন তিনি এমন উন্মাদের মতো আচরণ করলেন, সেসব জানা দরকার।
কেউ কেউ আবার বলছেন, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা যদি সামান্য কারণেই এমন আচরণ করে, তাহলে তো বাবা-মায়েরা তাদের শাসনটুকুও করতে পারবে না। তাতে আদৌ কারও ভালো হবে? জলপাইগুড়ির ঘটনা নিয়ে অনেকেই তাই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।