একইদিনে তারা মায়ের আবির্ভাব তিথি ও লক্ষ্মীপুজো, ভক্ত সমাগম তারাপীঠে
বর্তমান | ১৫ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: আগামীকাল, বুধবার তারা মায়ের আর্বিভাব তিথি। আবার এই দিনেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। ফলত, দুই বিশেষ তিথি উপলক্ষ্যে ভক্ত সমাগমে ভাসতে চলেছে তারাপীঠ। সোমবার থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন ভিড় জমাতে শুরু করেছেন এই সিদ্ধপীঠে। এদিন মা তারা সারাদিন নিজ বিশ্রাম মন্দিরে বিরাজ করবেন। ভক্তরা মাকে স্পর্শ করে পুজো নিবেদন করতে পারেন। সন্ধ্যায় দেবীকে গর্ভগৃহে ফিরিয়ে এনে লক্ষ্মীরূপে পুজো নিবেদন করা হবে। বছরের এই একটিমাত্র দিনে মায়ের কোনও অন্ন ভোগ হয় না।
কথিত, পাল রাজত্বের সময় শুক্লা চর্তুদশী তিথিতে জয়দত্ত সদাগর স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্মশানের শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনের নিচ থেকে মায়ের শিলামূর্তি উদ্ধার করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পুজোর সূচনা করেন। তখন থেকেই এই দিনটি তারা মায়ের আর্বিভাব তিথি হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। তাই, বুধবার খুব সকালে শুক্লা চর্তুদশী তিথিতে সূর্যোদয়ের পর তারা মা’কে গর্ভগৃহ থেকে বের করে বিশ্রাম মন্দিরে নিয়ে আসা হবে। জীবিতকুণ্ড থেকে জল এনে মাকে স্নান করানোর পর রাজবেশে সাজানো হবে। এদিন দেবী তারাকে তাঁর ছোট বোন মলুটির মা মৌলিক্ষার মন্দিরের দিকে মুখ করে বসানো হয়। কথিত, বাংলা ১১০৮ ও ইংরেজি ১৭০১ সালে আর্বিভাব তিথিতে বিশ্রাম মন্দিরে তারা মা’কে পূর্বদিকে বসিয়ে পুজো শুরু করার তোড়জোড় করছেন তদানীন্তন তান্ত্রিক, পুরোহিত ও পান্ডারা। এমন সময় মলুটির নানকার রাজা রাখরচন্দ্র মায়ের সামনে আরাধনায় বসেন। যা দেখে তান্ত্রিক, পুরোহিত ও পান্ডারা রে রে করে উঠলেন। রাজাকে আসন থেকে তুলে পুজোপাঠ বন্ধ করে দেন তাঁরা। রাজা অভিমান করে চলে এসে দ্বারকা নদের পশ্চিম পাড়ে ঘট প্রতিষ্ঠা করে মায়ের পুজো করে মলুটি গ্রামে ফিরে যান। ওই রাতেই প্রধান তান্ত্রিক প্রথম আনন্দনাথকে তারা মা স্বপ্ন দিয়ে বলেন, ‘রাখরচন্দ্র আমার ভক্ত। সে অভিমান করে চলে গিয়েছে। এবার থেকে এই দিনটিতে যেন আমাকে মলুটির কালিবাড়ির দিকে মুখ করে বসানো হয়।’ সেই থেকে বিশেষ এই তিথিতে বিরাম মঞ্চে মাকে পশ্চিমমুখী বসিয়ে পুজো হয়ে আসছে। ওইদিন সকালে মায়ের বিশেষ পুজা ও মঙ্গলারতির পর সর্বসাধারণের জন্য বিশ্রামাগার খুলে দেওয়া হবে। সকলে মা’কে স্পর্শ করে পুজো দিতে পারবেন। এদিন মায়ের কোনও অন্নভোগ হয় না। তাই সেবাইতরাও উপবাস করে থাকেন। দুপুরে লুচি, সুজি ও মিষ্টি সহকারে ভোগ নিবেদন করা হয়। এবার, বুধবার রাত সাতটা বেজে ৪৬ মিনিটে পঞ্চমী তিথি শুরু হচ্ছে। তাই সেই তিথি শুরুর আগে সন্ধ্যায় দেবীকে গর্ভগৃহে ফিরিয়ে এনে স্নান করিয়ে রাজবেশে সাজিয়ে দেবী তারাকে লক্ষ্মীরূপে পুজো ও আরতি নিবেদন করা হবে। রাতে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, মাছ, মাংস দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। সেই প্রসাদ খেয়ে উপবাস ভাঙেন সেবাইতরা।
মন্দিরের সেবাইত তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মায়ের আর্বিভাব তিথি ও তারা অঙ্গে লক্ষ্মী পুজো দিতে এদিন থেকেই ভক্তরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন।’ মন্দির কমিটির সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আর্বিভাব তিথি উপলক্ষ্যে মন্দির চত্বর রকমারি আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হবে। একসময় এই তিথিতে মেলা বসত। দুরদুরান্ত থেকে গরুর গাড়িতে করে ভক্তরা আসতেন। বর্তমানে জায়গার অভাবে সেই মেলা আকর্ষণ হারিয়েছে। তবে ভক্তের সমাগম যত দিন যাচ্ছে বেড়েই চলেছে।’ ফাইল চিত্র