নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: অতীতে জগদ্ধাত্রী পুজো কিংবা কালীপুজোর বিসর্জনের রাতে কৃষ্ণনগর শহরে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। একাধিক পুজো কমিটির একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। এবার দুর্গাপুজোতেও সেই একই দৃশ্য দেখা গেল। রবিবার কৃষ্ণনগরে দুর্গাপুজোর প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করেও ব্যাপক অশান্তি ছড়াল শহরে। বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি শোভাযাত্রায় বেরিয়ে নিজেদের মধ্যেই মারপিট শুরু করে দেয়। সংঘর্ষের সেই সমস্ত ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। যদিও ‘বর্তমান› সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি। বাঁশ, লাঠি নিয়ে বিভিন্ন পুজো কমিটির মদ্যপ সদস্যরা একে অপরের উপর চড়াও হয়। এক যুবক রীতিমতো ‘গণপিটুনি’-রও শিকার হন। সবমিলিয়ে রবিবার কৃষ্ণনগরের বিসর্জনের রাত কার্যত সমরভূমিতে পরিণত হয়েছিল। ঘটনায় তিনজন গুরুতর জখম হয়েছে বলে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কোতোয়ালি থানার পুলিসকে ব্যাপক লাঠিচার্জ করতে হয়।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এক আধিকারিক বলেন, ‘দুটি পুজো কমিটির বিরুদ্ধে পুলিস স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করছে। ঘটনায় বেশ কয়েকজন জখম হয়েছে। পুলিস ঝামেলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।’
প্রতিবছরই হাতেগোনা কিছু পুজো কমিটি ছাড়া অধিকাংশই নমঃ নমঃ করে দুর্গাপুজো সারে। তাই অতীতে প্রতিমা বিসর্জনে সেভাবে ঝামেলা হয়নি বলেই জানাচ্ছে শহরবাসী। শান্তিপূর্ণভাবেই পুজো কমিটিগুলো কদমতলা ঘাটে গিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন করে এসেছে। যার জন্য দুর্গাপুজোর ভাসানে কৃষ্ণনগর শহরে সেভাবে বড় পুলিস ফোর্স থাকে না। তবে এবার কৃষ্ণনগর শহরে দুর্গাপুজোর ভাসানের ছবিটা ছিল একটা অন্যরকম। শহরের রাজপথে রক্তের দাগ, ভাঙচুর, রাস্তার উপর পড়ে থাকা ইটের টুকরো, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা ফাটা বাঁশ। কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়, চ্যালেঞ্জের মোড় সর্বত্রই ব্যাপক সংঘর্ষের ছাপ ছিল স্পষ্ট।
রবিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিমা নিরঞ্জন শুরু হয়েছিল। প্রথমে দিকে পরিস্থিতি একদম স্বাভাবিক ছিল। শোভাযাত্রা করেই বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলো কদমতলার ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। রাস্তার দু’ ধারে শহরবাসী সেই শোভাযাত্রা দেখছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে রাত দশটার পর থেকে। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ কৃষ্ণনগর শহরের হাই স্ট্রিটের উপর শক্তিনগরের বৈকুণ্ঠপুর ও নগেন্দ্রনগর এলাকার গেট রোড এলাকার দু’টি পুজো কমিটি একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুই কমিটির সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক মারপিট হয়। ঘটনাস্থলেই দুজন জখম হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাস্তার দু’ ধারে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ সংঘর্ষ দেখে সরে যান। ওই দু’টি পুজো কমিটির বিরুদ্ধে পুলিস স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে বলে জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, ওভারটেক করা নিয়েই ঝামেলার সূত্রপাত।
রাত বারোটা নাগাদ রাধানগর এলাকার একটি পুজো কমিটি কদমতলা ঘাটের দিকে প্রতিমা নিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় হঠাৎ নগেন্দ্রনগর এলাকার কিছু যুবক তাদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে বলে অভিযোগ। তখন উভয়পক্ষে একে অপরের দিকে বাঁশ নিয়ে তেড়ে যায়। তারপর হঠাৎ নগেন্দ্রনগরের একদল যুবক বাঁশ নিয়ে রাধানগর পুজো কমিটির দিকে তেড়ে আসে। এমনকী রাধানগরের এক যুবককে রাস্তায় ফেলে বাঁশ দিয়ে পেটাতে দেখা যায়। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানার পুলিস শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। কৃষ্ণনগরে উত্তেজনা।