সুমন করাতি, হুগলি: একদিন সিঙ্গুর আন্দোলনে সঙ্গ দিয়েছিলেন। তার পর ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান। মাঝে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক বছর। বদলে গিয়েছে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়। বর্তমানে বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রতন টাটার প্রয়াণের পর শিল্প ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে সিঙ্গুরে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন তিনি। রতন টাটার ছবি নিয়ে শুক্রবার সিঙ্গুরের সাহানাপাড়া থেকে মৌন মিছিল করেন শুভেন্দু। পরে সভা শেষে রাজ্য সরকারকে তোপও দাগেন তিনি।
শুভেন্দু বলেন,”আমার দম আছে অকথিত তথ্য আজ দিচ্ছি। সিঙ্গুরে টাটা কারখানার বিরোধিতা করার কথা সেই সময় মুখ ফুটে বলতে পারিনি। কারণ, তৃণমূলে ছিলাম। কিন্তু এই ধ্বংস যজ্ঞে সামিল হইনি। ২৬ দিনের স্যান্ডুইচ, চকোলেট খাওয়া অনশনে একমাত্র বিধায়ক আমি যাইনি।” শুভেন্দুর আশ্বাস,”বিজেপি ক্ষমতায় এলে হাতে, পায়ে ধরে টাটাকে ফেরাব। টাটা ছাড়া শিল্প হয় না। আমি দেখেছি এপিজে আব্দুল কালাম আর রতন টাটাকে ভালো ছাড়া কেউ খারাপ বলেননি। শিল্প হলে শুধু সিঙ্গুর নয়। গোটা বাংলার উন্নয়ন হয়। এত আইটিআই কলেজ, ভোকেশনাল ট্রেনিং সব বেকার। ভাতা কোনও সমাধান নয়। কর্মসংস্থান আর সরকারের রাজস্ব বাড়াতে গেলে প্রয়োজন শিল্পের।” এর পর তিনি সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বেচারাম মান্নাকে কটাক্ষ করে বলেন, “সিঙ্গুরের জমির সর্বনাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু প্রোমোটিং আর তোলাবাজি। বেচারাম মান্না পুলিশ যদি সরে যায় পিঠের চামরা তুলে দেবে মানুষ।”
শুভেন্দুর আক্রমণের তালিকার ছিলেন হুগলির তারকা সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিরোধী দলনেতার কটাক্ষ, “রচনা দিদিমণি সাংসদ হয়েছেন। তিনি আকাশে ধোঁয়া দেখে বললেন শিল্প হয়েছে। আরেকজন কয়েকদিন আগে বর্ধমানে গিয়েছিলেন বললেন ডানকুনি পর্যন্ত কোনও জায়গা ফাঁকা নেই। এত শিল্প হয়েছে।” শুভেন্দু আরও বলেন, “সিপিএম এর জন্য মমতা এখানে ঢুকতে পেরেছিল। ১৩ হাজার জমির মালিক ছিল। বেশিরভাগ চাষি চেক নিয়েছিলেন। বর্গাদারকে টাকা দিতে চায়নি সিপিএম। জাতীয় সড়ক বন্ধ করে নেচেছে, খেয়েছে। বুদ্ধবাবু যদি মেরে তুলে দিতেন, তাহলে সিঙ্গুরের এই অবস্থা হত না। জ্যোতিবাবু থাকলে হত না। অন্তরটা জ্বলে যেত একটা কারখানাকে ভেঙে তুলে দিল। বলেছিল মাছ চাষ হবে। কী করে হবে এখানে? এখনও টাটার রড-ইট-বালি রয়েছে।”
শুভেন্দুর বক্তব্য নিয়ে শুরু জোর রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, বামেদের ভুল শিল্পনীতির কারণে সিঙ্গুরে টাটার কারখানা হয়নি। তার খেসারত টাটা এবং কৃষকদের দিতে হচ্ছে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বিরোধী দলনেতাকে কটাক্ষ করেন। তাঁর দাবি, সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় শুভেন্দুও যে সঙ্গ দিয়েছিলেন, তা ভোলেননি সাধারণ মানুষ। তবে শুভেন্দুর সুরে সুর মিলিয়ে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ক্ষমতায় আসলে সিঙ্গুর কিংবা তার আশপাশের যেকোনও জায়গায় টাটাদের সহযোগিতায় কারখানা গড়ে তোলা হবে।