হিমাংশু সিংহ: মাননীয় ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামী, আপনার জ্বালাটা কীসের? কোন স্পর্ধায় আপনি ৫ কোটি টাকার মানহানির মামলার হুঁশিয়ারি দিয়ে ‘বর্তমান’কে চিঠি পাঠালেন? আপনার এই ‘থ্রেট কালচার’-এ আমরা আশ্চর্য হয়ে গেলাম। আপনি শুধু ‘বর্তমান’-এর মানহানিই করলেন না, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেই আইনি চিঠি এসএফআই, ডিওয়াইএফআই সহ বামেদের সহায়তায় আগাম ছড়িয়ে দিলেন সমাজমাধ্যমে। অথচ আমাদের প্রতিবেদনে কোথাও আপনার নাম করা হয়নি, কোনওভাবে অভিযুক্তও করা হয়নি। আপনার বিরুদ্ধে একটি বাক্যও ছাপা হয়নি। আমরা শুধু তেইশ বছর আগের আর জি কর হাসপাতালের ডাক্তারি ছাত্র সৌমিত্র বিশ্বাসের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর ও পুত্রহারা মায়ের হাহাকার ছেপেছি, যিনি ‘বিচার’ না পেয়ে পুত্রশোক আর চোখের জলে ভেসে কিছুদিন আগেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন। সেদিন বামেদের দাপটে ওই মহিলার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কেঁদেছে। সিআইডি গোটা ঘটনাকে আত্মহত্যা বলেই চালিয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, আপনার নাম প্রতিবেদনে না থাকা সত্ত্বেও আপনার গায়ে এত লাগছে কেন? ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি গোছের হয়ে গেল না কি? ভয় দেখিয়ে পাঁচ কোটি টাকাই বা দাবি করছেন কোন আক্কেলে!
আচ্ছা সুবর্ণবাবু, একটা কথা বলুন তো, ‘বর্তমান’-এর মানহানি করার অপচেষ্টার জন্য আপনার বিরুদ্ধে ঠিক কত কোটি টাকার পাল্টা মামলা করা উচিত? আপনার উকিলের পাঠানো মানহানির মামলার হুমকি নোটিস সিপিএমের লোকজনের কাছে কে পৌঁছে দিল? জবাব দেবেন সুবর্ণবাবু? স্পষ্ট করে বলতে চাই, অভয়ার মতো এরকম আরও ঘটনা নজরে এলে একইভাবে গুরুত্ব দিয়ে ছাপব প্রথম পৃষ্ঠায়। আপনি কিছুই করতে পারবেন না। একথাও বলব, সেদিনের সরকার ও প্রশাসন পুরো ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে চালালেও তাঁর পরিবার কিন্তু এখনও তা বিশ্বাস করে না। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘থ্রেট সিন্ডিকেট’-এর শিকার হয়েই ওই নিরীহ প্রতিভাবান ডাক্তারকে ‘খুন’ হতে হয়। এটাই প্রমাণ করে বাম আমলে ভয় দেখানোর সংস্কৃতি কেমন ফল্গুধারার মতো প্রবাহমান ছিল।
আবারও বলছি, প্রতিবেদনে আপনার নাম কোথাও নেই। শুধুমাত্র প্রতিবেদনের শেষে একটি প্রতিক্রিয়া আছে মাত্র। তাও সেই সময়ের একজন এসএফআই নেতা হিসেবে, অভিযুক্ত হিসেবে নয়। তার জবাবে যে চিঠি আপনি ‘বর্তমান’কে দিলেন, তা আমাদের দপ্তরে পৌঁছনোর ২৪ ঘণ্টা আগে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল করলেন কোন যুক্তিতে? ‘বর্তমান’-এর মর্যাদা সম্পর্কে আপনার নিশ্চয়ই ধারণা রয়েছে? আপনি সেই মর্যাদাহানি করার চেষ্টা করেছেন। তার মূল্য চোকাতে তৈরি তো?
পরিশেষে বলি, যতই ভয় দেখানোর চেষ্টা হোক আমরা কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র নই। আপস করার প্রশ্নই নেই। কোথাও কোনও অসঙ্গতি, অবিচার, চিকিৎসক সমাজের হাতে গরিব রোগীদের বঞ্চনা, ওষুধ সংস্থা ও নার্সিংহোমের সঙ্গে ডাক্তারদের সিন্ডিকেট নজরে এলে আগামী দিনেও গর্জে উঠব। দাবি করব, সরকারি ডাক্তারদের কাজের সময়ে প্রাইভেট চেম্বার ও নার্সিংহোমে প্র্যাকটিস নিষিদ্ধ হোক। যতই বাধা-হুমকি আসুক, এই প্রতিবাদের পথ থেকে কেউ আমাদের বিচ্যুত করতে পারবে না। আপনি তো কোন ছাড়! কায়েমি স্বার্থকে আমরা ভয় পাই না।