বন্ধ হয়েছে ২৭ হাজার সরকারি বিদ্যালয়, ‘সিএম রাইজ’ প্রকল্পে পিপিপি মডেলে চলবে স্কুলশিক্ষা
বর্তমান | ২০ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্যের ২১ হাজার স্কুলে একজন করে শিক্ষক। ২৬০০ স্কুলে কোনও শিক্ষকই নেই। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ২৭ হাজার স্কুল। ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের মধ্যপ্রদেশে সরকারি স্কুলের এমনই বেহাল দশা। এর বিরুদ্ধে শিক্ষাবিদ থেকে বিভিন্ন স্তরের মানুষ সেখানে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।
কয়েক বছর আগেও হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যে ১ লক্ষ ২০ হাজার সরকারি স্কুল ছিল। বন্ধ হতে হতে তা এখন ৯৪ হাজারে এসে ঠেকেছে। এর মুখ্য কারণ ‘সিএম রাইজ’ প্রকল্প। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-এর নির্যাস নিয়ে এই প্রকল্পের অধীনে পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে স্কুল তৈরি করা হচ্ছে। আর তা করা হচ্ছে সরকারি স্কুলের জমি এবং ভবনে। ‘সি এম রাইজ’ স্কুল তৈরি হলে ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে আর কোনও সরকারি স্কুল থাকবে না। সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই প্রকল্প শুরু হওয়ার পর ছাত্রসংখ্যা কম থাকার অজুহাতে ২৬-২৭ হাজার স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
সমাজসেবী, শিক্ষক আন্দোলনের কর্মী তথা জব্বলপুরের এসইউসিআই নেতা শচীন জৈন বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। তিনি অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটির মধ্যপ্রদেশ শাখার সম্পাদকও বটে। শচীনবাবু ফোনে জানান, জাতীয় শিক্ষানীতি আসার আগেই স্কুলশিক্ষার বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা চালু হয়েছিল রাজ্যে। ‘সিএম রাইজ’ প্রকল্প চালু হওয়ায় সেই প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। নয়া মডেলের স্কুলে ন্যূনতম খরচ বার্ষিক ৬-৭ হাজার টাকা। এগুলিতে সুযোগ পাবে ১০ শতাংশ পড়ুয়া। বাকিদের পুরোপুরি বেসরকারি স্কুলের দ্বারস্থ হতে হবে। কারণ, ‘সিএম রাইজ’ স্কুলের চারপাশে আর কোনও সরকার পোষিত স্কুল খোলা রাখা যাবে না। স্থায়ী এবং অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ তো আগেই হয়েছে। যাঁরা কর্মরত, তাঁদের চাকরি রাখা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে এখন। কারণ, ‘সিএম রাইজ’ স্কুলে সবাইকে চাকরি দেওয়া যাবে না।
শনিবার মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলায় এ বিষয়ে একটি কনভেনশন আয়োজন করে সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির মধ্যপ্রদেশ শাখা। মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের কাছে ফের স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। বিভিন্ন বক্তার কথায় উঠে আসে, পিপিপি মডেলের নামে স্কুলগুলিকে কর্পোরেট সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের কাছে সরকারি স্কুলশিক্ষা অংশ হওয়ার জন্য কোনও বিকল্প থাকবে না। সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর বলেন, ‘এই সিএম রাইজ প্রকল্পে শিক্ষার রাইজ তো হবেই না, উল্টে তা অস্তাচলে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী এখনও এই প্রকল্প বন্ধের কোনও আভাস দিচ্ছেন না। অন্যান্য রাজ্যেও ব্যাপক হারে তা চালু হলে গোটা দেশের শিক্ষাব্যবস্থাই পরিচালিত হবে কর্পোরেট সংস্থার মাধ্যমে।’