ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হল গভীর নিম্নচাপ ‘ডানা’, সাগরদ্বীপ থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান
বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’য় পরিণত হল গভীর নিম্নচাপ। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, বঙ্গোপসাগরের উপরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি গতকাল ঘণ্টায় ১৮ কিলোমিটার বেগে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে। গত ৬ ঘণ্টায় এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এই মুহূর্তে সাগরদ্বীপ থেকে এটি ৬৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। পাশাপাশি, ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে এর অবস্থান ৫৬০ কিলোমিটার দূরে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ‘ডানা’ ক্রমেই উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোবে এবং অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। আগামীকাল, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়বে ‘ডানা’। ‘ল্যান্ডফল’-এর সময়ে এর সর্বাধিক গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার। ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথের যে ‘গ্রাফিক্স’ দেখিয়েছে, তাতে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল ওড়িশার ভদ্রকের আশপাশ দিয়ে স্থলভাগে ঢুকতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিক হবিবুর রহমান বিশ্বাস বলেন, “ওড়িশা উপকূলে ল্যান্ডফল হলেও দক্ষিণবঙ্গে জোরালো প্রভাব পড়বে ‘ডানা’র। দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা আগেই জারি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের অন্যত্রও কমবেশি বৃষ্টি চলবে।”
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপকূল এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া শুরু হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরে ঝোড়ো হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার হতে পারে। সাগরদ্বীপ ও সুন্দরবন এলাকায় ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু এলাকায় ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া।
দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আগাম একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, হাওড়া ও হুগলি— এই ন’টি জেলায় আজ, বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এসব জেলায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। সমুদ্র ও নদী সংলগ্ন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, ইতিমধ্যে জেলাগুলিতে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। কলকাতা সহ জেলায় জেলায় চালু করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ডিভিসির বাঁধ থেকে জল ছাড়ার কারণে নিম্ন দামোদর অববাহিকা অঞ্চলে নতুন করে যাতে পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে ব্যাপারে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ কেন্দ্রের ক্যাবিনেট সচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঘূর্ণিঝড়ের জন্য পর্যটকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।