দেব গোস্বামী, বোলপুর: বাড়ির দোতলা নির্মাণ নিয়েই ঝামেলা, প্রতিবেশীর সঙ্গে বিবাদ। জল গড়িয়েছিল আদালতে। পরবর্তীতে দুপক্ষ মীমাংসা করে কাজে হাতে দেন। তাতেই সমস্যার শুরু। পুলিশকে টাকা না দিয়ে কেন কাজ শুরু? কার্যত এই অপরাধেই বাড়ির মালিককে থানায় আটকে রাখা ও ১ লক্ষ টাকা দাবি করা হয় বলেও অভিযোগ। চলে মারধরও। অবশেষে দিদিকে বলো-তে ফোন করে বিষয়টি জানান ওই ব্যক্তির স্ত্রী। তড়িঘড়ি পদক্ষেপ। কীর্ণাহার থানার ওসির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ সোজা মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের।
বীরভূমের কীর্ণাহার থানার মিরাটী গ্রামের ব্রাহ্মণপাড়ার ঘটনা। ঐ গ্রামেরই বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও তাঁর পরিবার। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে বাড়ির দোতলা নির্মাণ নিয়েই ঝামেলা-বিবাদ চলছিল প্রতিবেশীর সঙ্গে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণে স্থগিতাদেশ দেয় বিচারক। পরবর্তীতে প্রতিবেশীর সঙ্গে মীমাংসা করে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। এর পরই চলতি মাসের ১৭ তারিখে কীর্ণাহার থানার ওসি তাঁকে একজন সিভিক ও কনস্টেবল মারফত ডেকে পাঠান। থানায় যেতে দেরি করায় রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরেরদিন অর্থাৎ ১৮ অক্টোবর পরিজনদের পুলিশ জানায়, ১ লক্ষ টাকা দিলেই ছেড়ে দেওয়া হবে। এমনকি তাঁকে মারধরও করা হয় বলেই পরিবারের অভিযোগ। পরবর্তীতে ২০ হাজার টাকায় রফা হয়। রবীন্দ্রনাথ ১০ হাজার টাকা দিয়ে আসেন ওসিকে নিজের হাতেই। এর পরই ‘দিদিকে বলো’র ট্রোল ফ্রি নম্বরে অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রী সুমিত্রা ঘোষ৷
জানা গিয়েছে, নবান্ন থেকে বিষয়টি দেখার জন্য বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেওয়া হয়৷ সেই মতো বোলপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রিকি আগরওয়ালের নেতৃত্বে কীর্ণাহার থানার ওসি শেখ আশরাফুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও সুমিত্রা ঘোষকে নিজের দপ্তরে ডেকে বিষয়টি জানেন বোলপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক। তবে কীর্ণাহার থানার ওসি শেখ আশরাফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এই প্রথম নয়। বিভিন্ন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্নজনের কাছে টাকা চাওয়ায় অভিযোগ উঠেছে আগেও। জেলা পুলিশ সুপারের কাছে একাধিক অভিযোগও জমা পড়েছে বলেই পুলিশ সূত্রে জানা যায়। একাধিকবার বিভিন্ন বিতর্কে নাম জড়িয়েছে তাঁর।
রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমি এত টাকা দিতে পারবো না সেটা ওসিকে জানাই৷ তখন ওসি নিজেই ৫০ হাজার টাকার কথা বলেন। সেটাও দিতে পারবো না বলি৷ তখন ২০ হাজার টাকায় রফা হয়৷ তার মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি৷ আমার স্ত্রী ‘দিদিকে বলো’তে অভিযোগ জানিয়েছে।” রবীন্দ্রনাথ ঘোষের স্ত্রী সুমিত্রা ঘোষ জানান, “আমার স্বামীকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। আমি ‘দিদিকে বলো’তে ফোন করে অভিযোগ করেছি৷ আমি চাই দিদি বিষয়টি দেখুন। জেলার পুলিশ প্রশাসন সুবিচার করুক।” যদিও, এবিষয়ে কীর্ণাহার থানার ওসি শেখ আসরাফুল জানান, “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছিল বলে থানায় ডেকেছিলাম৷ পুলিশ তুলে নিয়ে এসেছে বলে সম্মানে লেগেছে তাই অভিযোগ করেছে। যেহেতু অভিযোগ করেছে তাই তদন্ত হচ্ছে।” বোলপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”