কৌশিক ঘোষ, কলকাতা: গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল। চাল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশছোঁয়া দামে হাঁসফাস অবস্থা সেখানকার মানুষের। এই অবস্থায় চালের দাম কমাতে মরিয়া সিদ্ধান্ত নিল মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। চালের উপর থেকে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে নিয়েছে তারা। ইতিমধ্যে ভারত সরকারও সম্প্রতি চালের উপর রপ্তানি কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। দুই দেশের এই দুই সিদ্ধান্তের কারণে চাল রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে। অবস্থানগত নৈকট্যের কারণে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই মূলত চাল রপ্তানি হয়। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের খোলা বাজারে চালের জোগান কিছুটা কমতে পারে। আর জোগান কমলে স্বাভাবিক নিয়মে বাজারে চালের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ মধ্যবিত্তের। রাজ্যের বাজারে এখনই চালের দাম বেশ চড়া। তবে বাংলাদেশে চাল রপ্তানির জন্য খোলা বাজারে ধানের দাম বাড়লে রাজ্যের চাষিরাই তার ফায়দা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। খরিফ মরশুমে নতুন ধান ওঠার মুখে এই সুবিধাজনক পরিস্থিতি তাঁদের সহায়ক হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত প্রায় দু’বছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে চাল রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০২২ সালেও পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাসে গড়ে প্রায় ৩ লক্ষ টন চাল বাংলাদেশে গিয়েছিল। পরে বাংলাদেশ সরকার ২৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক চাপানোয় রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রের মোদি সরকার সেদ্ধ ও আতপ চালের রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। ভোটের সময় দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। ভোট মিটে যেতেই চাল রপ্তানির উপর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। সেদ্ধ চাল রপ্তানির উপর প্রথমে ২০ শতাংশ ও পরে ১০ শতাংশ হারে কর ছিল। সম্প্রতি এই রপ্তানি কর পুরোপুরি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকার অক্টোবর মাসেই চালের আমদানি শুল্ক কিছুটা কমিয়েছিল। তারপরেও দাম না কমায় ৩১ অক্টোবর সেই দেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সেদ্ধ ও আতপ চালের আমদানির উপর সব ধরনের কাস্টমস ও রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। শুধুমাত্র সুগন্ধী চালের ক্ষেত্রে এই ছাড় দেওয়া হয়নি। এই সিদ্ধান্তের ফলে আমদানির পর্যায়েই চালের দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা করে কমবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ সরকার। এ রাজ্যের মোটা স্বর্ণ ধান থেকে উৎপাদিত সেদ্ধ চাল বাংলাদেশে বেশি পরিমাণে রপ্তানি হয়। সেই প্রক্রিয়া ফের শুরু হলে পশ্চিমবঙ্গের রুগ্ন রাইস মিল শিল্প চাঙ্গা হবে বলে আশা করছেন মিল মালিকদের সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক। বাংলাদেশে চাল রপ্তানির প্রভাবে এ রাজ্যে ধানের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। তাতেও সরকারি উদ্যোগে চাষিদের থেকে ধান কেনার কাজ ব্যাহত হবে না বলে মনে করছেন খাদ্যদপ্তরের কর্তারা।