ঘাটালের স্কুলে মনীষীদের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করলেন চা বিক্রেতা ও বিশেষভাবে সক্ষম যুবতী
বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, ঘাটাল: নেতা, জনপ্রতিনিধি বা আধিকারিক নয়, চা বিক্রেতা ও এক বিশেষভাবে সক্ষম যুবতীকে দিয়ে বিদ্যালয়ে দুই মনীষীর মূর্তির আবরণ উন্মোচন হল। বুধবার ঘাটাল ব্লকের কুঠিঘাট কোণারপুর শীতলানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ব্যতিক্রমী ঘটনা দেখা গেল। স্কুল কর্তৃপক্ষের ভাবনা প্রশংসা কুড়িয়েছে। এদিন সেখানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও বীর শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তির আবরণ উন্মোচন হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে ঘাটালের বিডিও অভীক বিশ্বাস, বিদ্যালয় পরিদর্শক সুদীপ সাহা, ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামলী সর্দার, সহকারী সভাপতি বিকাশ কর সহ অন্যরা অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন। তাঁরাও এহেন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। বিকাশবাবু বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই ভাবনা আমাদেরও খুব ভালো লেগেছে।
১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে এতদিন কোনও মনীষীর মূর্তি ছিল না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিন্টু দোলই বলেন, এবছরই স্কুলে বিদ্যাসাগর ও ক্ষুদিরামের মূর্তি বসানোর জন্য এগিয়ে আসেন মলয় জানা। তিনি এই স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র। তাঁর এবং এলাকার বাসিন্দাদের ইচ্ছেতেই ঠিক করা হয়, কারা মূর্তি দু’টি উন্মোচন করবেন।
বিদ্যাসাগরের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন বিশেষভাবে সক্ষম যুবতী রুণা মণ্ডল। তিনি মাস্টার্স ও বিএড করেছেন। শহিদ ক্ষুদিরামের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন ওই গ্রামের চা দোকানি কাশীনাথ ভুঁইয়া। স্থানীয় বাসিন্দা সুরজিৎ ভুঁইয়া বলেন, ‘ক্ষুদিরাম একবার বলেছিলেন, তিনি এমন মানুষের কাছেই এক গ্লাস জল পান করবেন, যিনি ইংরেজদের দালাল নন। তখন এক চা দোকানি নির্ভীকভাবে এগিয়ে এসে তাঁকে জলপান করিয়েছিলেন। সেজন্য বিদ্যালয়ে তাঁর মূর্তির আবরণ উন্মোচন এক চা দোকানিকে দিয়েই করানো হয়েছে। নারীশিক্ষার পথিকৃৎ বিদ্যাসাগরের মূর্তি গ্রামেরই এক উচ্চশিক্ষিত যুবতীকে দিয়ে করা হয়েছে।’ রুণাদেবী ও কাশীনাথবাবু এদিন মনীষীদের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাঁরা বলেন, জীবনে এধরনের সুযোগ আসবে কখনও ভাবিনি।
শুধু এটুকুই নয়, ওই গ্রামে যে সমস্ত মহিলা মাধ্যমিক পাস করেছেন, তাঁদের এদিন সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ৬৮বছরের প্রবীণা সুতপা দাস বলেন, জীবনে এই প্রথম কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানাল। খুব ভালো লেগেছে। দাসপুর-১ ব্লকের টালিভাটার বধূ তথা ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী তোতা সানাও একই কথা বলেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, এলাকার ৩০জন বৃদ্ধকেও এদিন সম্মানিত করা হয়।