• কয়লা পাচার মামলা: আদালতে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন, ভার্চুয়ালি হাজিরা বিকাশসহ ৩ জনের
    বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব সংবাদদাতা, আসানসোল: কয়লা পাচার মামলায় অবশেষে চার্জ গঠন হল। আজ মঙ্গলবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে ৪৯ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। ভার্চুয়াল মাধ্যমে আদালতে হাজির করানো হয় কয়লা পাচার মামলায় অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্রকে।


    আজ আদালতে চার্জ ফ্রেম হয় ৪৯ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। অনুপ মাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ- ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়কালে ইসিএলের লিজ হোল্ড এলাকা থেকে প্রায় ৩১  লক্ষ মেট্রিক টন কয়লা চুরি ও পাচার করা হয়েছে। যার ফলে সরকারের প্রায় ১৩৪০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। নিজের লাভের জন্য নকল কাগজ তৈরি করে সেগুলিকে আসল বলে ব্যবহার করেছে অভিযুক্ত। এছাড়াও ইসিএলের বেশ কয়েকজন আধিকারিককে ঘুষ দিয়ে নিজের কাজ হাসিল করা ও প্রত্যেকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে গোটা কাজটা সংগঠিত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।


    সওয়াল-জবাব চলাকালীন বিচারক এদিন লালাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি দোষী না নির্দোষ ? এর উত্তরে লালা জানান তিনি নির্দোষ! কয়লা পাচার মামলায় সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটে মোট ৫০ জনের নাম ছিল। কিন্তু এই মামলায় অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র পলাতক।


    আদালত সূত্রে জানা গিয়েছিল, গত শুনানিতে মামলাটিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটিতে ২৩ জনের নাম ছিল। অন্যটিতে ২৭ জনের নাম ছিল। ২৩ জনের তালিকায় রয়েছেন অনুপ মাজি ওরফে লালা, রতনেশ বর্মা এবং বিকাশ মিশ্র। এই তিন জনের বিচারপ্রক্রিয়া আলাদা ভাবে হবে। কারণ, কয়লা পাচার মামলায় যত অভিযোগ উঠেছে, তার সব ক’টিতেই ওই তিন জনের যোগ রয়েছে। বাকি ২৭ জনের মধ্যে কেউ কোলিয়ারির ম্যানেজার, কেউ নিরাপত্তারক্ষী, কেউ বা আবার স্থানীয় দোকানদার।


    এই মামলায় চারটি পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন ধারায় চার্জফ্রেম গঠন হয়। এরা হল ১০ টি সংস্থার কর্তৃপক্ষ, ১২ জন ইসিএল আধিকারিক, ২০ জন ব্যক্তিগত লালার সহযোগী, ৪ জন কয়লা মাফিয়া। বাকি তিনজন বিশেষ অভিযুক্ত অনুপ মাজি, বিকাশ মিশ্র ও রত্নেশ ভর্মা।


    প্রসঙ্গতঃ, ২০২০ সালে কয়লা পাচার মামলার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। রাজ্যে রেলের বিভিন্ন সাইডিং এলাকা থেকে কয়লা চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই প্রথমে আয়কর দফতর ও পরে সিবিআই কয়লাকাণ্ডের তদন্তে নামে।


    এর আগে গত ৩ জুলাই  কয়লা পাচার মামলার চার্জ গঠনের দিন ধার্য হয়েছিল। অভিযুক্ত ও একাধিক সাক্ষী আদালতে অনুপস্থিত থাকায় ওইদিন চার্জগঠন হয়নি। তারপরেই বিচারক ৯ আগস্ট দিন ধার্য করেছিলেন। সেবার আদালতে কর্মবিরতি থাকায় চার্জগঠন হয়নি। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য হয়। সেদিন দুটি সংস্থার জটিলতা  থাকায় চার্জফ্রেম গঠন হয়নি। তারপরেই ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেন সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। ১৪ নভেম্বর  শুরু হয় চার্জফ্রেম গঠনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া। ওইদিন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারা দেওয়া হয়। ১৮ নভেম্বর অভিযুক্তদের আইনজীবিরা ধারাগুলি নিয়ে বিরোধিতা করেন। বিচারক সব পক্ষের যুক্তি শোনেন। তারপরেই ২৫ নভেম্বর অর্থাৎ সোমবার ফাইনাল চার্জফ্রেম গঠনের দিন ঠিক হয়েছিল। কিন্তু চার্জ গঠনে বাধা পেল বিকাশ মিশ্রর অনুপস্থিতি।


    উল্লেখ্য সিবিআইয়ের এই মামলায় ৩৯৬ জন সাক্ষী রয়েছেন। মামলায় অভিযুক্ত ৫০ জন। প্রত্যেকের জন্য রয়েছে ২৫ হাজার পাতার নথি। রয়েছে  ১১৪৯ পাতার তথ্যপ্রমাণ। এই মামলায় সিবিআই মোট তিনটি চার্জশিট জমা দিয়েছে। এরপর অবশেষে আজ, মঙ্গলবার গঠন হল চার্জফ্রেম।
  • Link to this news (বর্তমান)