মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন, ফরাক্কায় নাবালিকা ধর্ষণ ও খুনে দুই অপরাধীকে সাজা আদালতের...
আজকাল | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতবর্ষের নতুন ফৌজদারি আইনব্যবস্থা বিএনএস, চালু হওয়ার পর এই প্রথম রাজ্য তথা দেশের কোনও আদালত ধর্ষণ-খুনের মামলায় একসঙ্গে দুই ব্যক্তির একজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হল। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থানা এলাকায় বছর দশকের এক নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে জঙ্গিপুরের অতিরিক্ত জেলা এবং সেশন জাজ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, দীনবন্ধু হালদার নামে এক অপরাধীকে শুক্রবার মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনালেন এবং শুভজিৎ হালদার নামে অপর অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন। তাদের বিরুদ্ধে খুন, গণধর্ষণ ও তথ্য প্রমান লোপাট, অপহরণ এবং পকসো আইনের ৬ নম্বর ধারায় আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সফল হন সরকার পক্ষের আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার এই আদালত দু'জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জি বলেন, ''বৃহস্পতিবার বিচারক অভিযুক্তদের ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইনের ৬৫, ৬৬, ১৩৭, ১৪০, ১০৩, ২৩৮ এবং পকশো আইনের ৬ নম্বর ধারায় দু'জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। ৬১ দিনের মাথায় গোটা বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হল। দীনবন্ধুর শুক্রাণু এবং রক্তের ছিঁটে নির্যাতিতার পোশাক এবং শরীরে পাওয়া গিয়েছিল। পরে তার ডিএনএ 'ম্যাচিং' হয়।" তিনি বলেন, "ফুল দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ওই নাবালিকাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল দীনবন্ধু। এরপর দু'জনে মিলে কাপড় দিয়ে মুখ গুঁজে নাবালিকার উপর নারকীয় অত্যাচার চালায়। আমি বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমান দিয়ে এই ঘটনাকে বিরলতম প্রমানের চেষ্টা করেছি এবং ফাঁসির আবেদন করেছিলাম। বিচারক সমস্ত দিক বিবেচনা করে শুভজিৎ হালদারের আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাবাস এবং দীনবন্ধুকে ওই নাবালিকাকে অপহরণের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তাকে খুনের জন্য মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এছাড়াও তথ্য প্রমান লোপাটের জন্য দু'জনকে আরও ৭ বছরের সাজা শোনান বিচারক।"
উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর দাদুর বাড়ির সামনে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে খেলা করার সময় হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায় বছর দশেকের ওই নাবালিকা। এরপর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে দীনবন্ধু হালদার নামে এক মাছ ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ওই নাবালিকার বস্তাবন্দি মৃতদেহ। পরে পুলিশ দীনবন্ধুকে গ্রেফতার করে। ধৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, শুভজিৎ হালদার নামে আরও এক ব্যক্তি এই খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত। ১৯ অক্টোবর তাকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশি তদন্ত এবং ওই নাবালিকার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সাজা প্রাপ্ত দুই ব্যক্তি ওই নাবালিকাকে গণধর্ষণ করা ছাড়াও বিভিন্ন শারীরিক অত্যাচার করেছিল। মৃতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন এবং মাথায় গুরুতর আঘাতের উল্লেখ ছিল ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। এই মামলাটিকে 'ফুল প্রুফ' করার জন্য পুলিশের তরফ থেকে একাধিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার পাশাপাশি, ফরেন্সিক সাইন্স ল্যাবরেটরির 'টুল কিট' ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজ্যে এই প্রথম 'ড্রোন ম্যাপিং' করা হয় এই মামলায়।
জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায়ের নেতৃত্বে একটি তদন্তকারী দল ২১ দিনের মাথায় এই মামলার চার্জশিট দিয়েছিল। আজ ৬১ দিনের মাথায় বিচার পেল ওই নাবালিকার পরিবার। দীনবন্ধু হালদারের আইনজীবী মহম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, "আদালত দীনবন্ধুকে ফাঁসি এবং শুভজিৎ হালদারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করব।"