এই সময়, শিলিগুড়ি: মেয়র তিনিই। হর্তা–কর্তা–বিধাতাও তিনি। অথচ তাঁর ওয়ার্ডে পুরনিগমের তৈরি কমিউনিটি হল ‘দখল’ হয়ে গিয়েছে। উদ্ধারের জন্য শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারের দ্বারস্থ হয়েছেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের কর্তারা। শিলিগুড়ির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরিজন বস্তিতে থাকা ওই কমিউনিটি হল এক বছর ধরে চেষ্টা করেও উদ্ধার করতে পারেনি পুরসভা।
ইতিমধ্যে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট থেকে সংশ্লিষ্ট থানার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, রিপোর্ট তৈরি করে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার জোন (১)–এর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট যাবে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সি সুধাকরের কাছে। সেই রিপোর্ট পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ করবে কমিশনারেট।
সূত্রের খবর, ওই কমিউনিটি হল উদ্ধার করতে প্রচুর পুলিশ বাহিনী প্রয়োজন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ নিয়ে গেলেও প্রতিরোধ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় হরিজন সমাজের প্রধানরা। হরিজন যুবক সঙ্ঘের সভাপতি রাজেন্দ্র বাঁশফোরের বক্তব্য, ‘এই এলাকায় আমাদের আগে ক্লাব ছিল। পুরনিগম বলেছিল ক্লাবকে কমিউনিটি হল বানিয়ে আমাদের হস্তান্তর করবে। কিন্তু এখন বলছে ওরাই পরিচালনা করবে। আমরা এটা হতে দেব না। পুলিশ এলে আমরা আবার বাধা দেব।’
গোটা ঘটনায় এনজেপি থানার প্রাক্তন ওসি নির্মল দাস–এর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মেয়র গৌতম দেব। ওই কমিউনিটি হল উদ্ধার করতে এতদিন পুলিশের কোনও সহযোগিতাই মেলেনি বলে অভিযোগ। গৌতম বলেন, ‘ওখানে ওদের একটা ক্লাব ছিল ভাঙাচোরা। আমরা বলেছি সামনে কোন জায়গা দেখে দিতে। সেখানে বানিয়ে দেব। এরপর ওরা মানলে মানবে। না মানলে আমরা আমাদের মতন করে ব্যবস্থা নেব।’
শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে রেলের জমিতে হরিজনদের একটি ক্লাব ছিল। তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তথা মেয়র গৌতম দেব ক্লাবটিকে ভেঙে কমিউনিটি হল তৈরির প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান স্থানীয় হরিজন সমাজের লোকেরা। হরিজন বস্তির বাসিন্দাদের দাবি, মেয়র বলেছিলেন কমিউনিটি হল পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে হরিজন যুবক সঙ্ঘের হাতে।
পাশাপাশি কমিউনিটি হলের উপরে ক্লাবেরও জায়গা দেওয়া হবে। কিন্তু কমিউনিটি হল নির্মাণের পরে পুরকর্তারা তালা মেরে চলে যান বলে অভিযোগ। পুরনিগম জানিয়ে দিয়েছে, ওই ভবন নিজেদের অধীনেই রাখবে তারা। এরপরই বেঁকে বসেন হরিজন বস্তির বাসিন্দারা। একাধিক বার পুর আধিকারিকেরা কাজ করতে গেলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বেশ কয়েকবার পুলিশের টহলদারি ভ্যান গিয়েও কোন কাজ করতে পারেনি। এমনকী ভবনে পুরনিগমের কোনও বোর্ডও লাগাতে দেননি স্থানীয়রা।
ওই এলাকায় হরিজন সমাজের প্রায় ৯০০ ভোট রয়েছে। পুরনিগম জোরজুলুম করলে প্রতিরোধের পাশাপাশি ভোট বয়কট করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয়রা। হরিজনদের দাবি, তাঁরা ভোট দিয়ে গৌতম দেবকে ওই ওয়ার্ডে জিতিয়েছেন। তাই কথা শুনতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দা সুনীল রাউথ বলেন, ‘আমরা আমাদের ক্লাবের বিনিময়ে ওই কমিউনিটি হল বানাতে দিয়েছিলাম। তাই হলের দায়িত্ব আমাদেরই দিতে হবে। না–হলে এই অঞ্চলের মানুষ পুরনিগমকে এখানে কাজ করতে দেবে না।’