• হাওড়া শাখায় বাতিল একাধিক লোকাল, উপচে পড়া ভিড়ে তীব্র ভোগান্তি যাত্রীদের
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া ও চুঁচুড়া: সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে ভয়াবহ রেল-যাত্রার সাক্ষী থাকলেন হাওড়ার বিভিন্ন শাখার যাত্রীরা। দিনের ব্যস্ত সময়ে ব্যাপক ভিড়, হুড়োহুড়িতে উঠতে না পারার মতো ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু এদিন হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখা সহ বর্ধমান মেইন, কর্ড, তারকেশ্বর লাইনের যাত্রীরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন, তা আগে কখনও হয়নি বলে দাবি অনেকের। দীর্ঘক্ষণ ট্রেন নেই। প্ল্যাটফর্মে নেই তিল ধারণের জায়গা। অনেক সময় পর ট্রেন ঢুকলে কোনওরকমে ঝুলে পড়ছেন শ’য়ে শ’য়ে যাত্রী। ট্রেনের মধ্যে দমবন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি। প্ল্যাটফর্মে নেমে হাঁপাচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা। বহু মানুষ ট্রেন বাদ দিয়ে বাস ধরে কর্মস্থলে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছেন। ফলে জি টি রোড সহ হাওড়া-কলকাতামুখী রাস্তার বাসগুলিও ছিল ভিড়ে ঠাসা। হাওড়ার বেনারস রোড ব্রিজের নির্মাণকাজের জন্য পাওয়ার ব্লক করা হচ্ছে। তাই শনিবার থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত হাওড়ার বিভিন্ন শাখায় প্রতিদিন ৬০টি লোকাল বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব রেল। শনি ও রবিবার ভোগান্তির ছবি ততটা স্পষ্ট হয়নি। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে চরম দুর্ভোগ বুঝিয়ে দিল, আগামী মাসখানেক কপালে অনেক কষ্ট আছে!    


    এদিন সকাল থেকে বালি, বেলুড়, উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর স্টেশনে ভিড় উপচে পড়ে। লোকাল বাতিলের খবর জেনে অনেকে এদিন অনেকটা আগেভাগে স্টেশনে এসেছিলেন। কিন্তু সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে তিনটি শেওড়াফুলি লোকাল, তিনটি ব্যান্ডেল লোকাল ও একটি শ্রীরামপুর লোকাল বাতিল থাকায় বিপুল সংখ্যক যাত্রীর চাপ গিয়ে পড়ে হাওড়া-বর্ধমান মেইন ও কর্ড লাইনের বাকি ট্রেনগুলিতে। পরপর দু’টি ব্যান্ডেল-হাওড়া লোকাল বাতিল থাকার পর ১০টা নাগাদ এই শাখার পরবর্তী ট্রেনটি বালি স্টেশনে ঢুকলে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি লেগে যায়। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত ট্রেনের দরজায় ঝুলে পড়েন কেউ কেউ। সুশীল কুমার নামে এক নিত্যযাত্রী বলেন, ‘আমিও রেলে চাকরি করি। আগামী এক মাস কপালে কী আছে, আজই বোঝা গেল। এক ঘন্টা আগে স্টেশনে এসেও ট্রেন পেলাম না।’ কয়েকজন যাত্রীকে ব্যান্ডেল লোকাল থেকে বালি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চে বসে হাঁপাতে দেখা গেল। 


    ক্ষুব্ধ এক যাত্রী বালি স্টেশনে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে তিনদিনের জন্য ব্যান্ডেল স্টেশন ব্লক করে সিগন্যাল সিস্টেমের কাজ হয়েছিল। তখন রেল বলেছিল, আর নাকি ট্রেন লেট হবে না। কোথায় সমস্যা মিটল?’ চুঁচুড়ার বাসিন্দা গোপাল দাস ভিড়ে ঠাসা শ্রীরামপুর স্টেশনে দাঁড়িয়েছিলেন চোখেমুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে। তিনি বললেন, ‘১১টা ৫০ থেকে এক ঘণ্টা হতে চলল, একটাও ট্রেন আসেনি।’ তার আগে যে ট্রেন গিয়েছে, সেটায় উঠলে বেঁচে থাকতাম কি না, জানি না। এতদিন যাতায়াত করছি, এমন অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি।’ প্রসঙ্গত, ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন আপ ও ডাউনে ৩০টি ব্যান্ডেল লোকাল, ২২টি শেওড়াফুলি লোকাল, চারটি করে বেলুড় মঠ ও শ্রীরামপুর লোকাল বাতিল করা হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)