• কম্বল ব্যবসার ‘ভুয়ো’ কোম্পানির মাধ্যমে কালো টাকা সাদা লিঙ্কনের
    বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণগঞ্জ: সাইবার প্রতারণার জগতে নবতম সংযোজন ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’। তটস্থ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও। ঘরের মধ্যেই দেশবাসীকে ‘ভুয়ো-জেলে’ বন্দি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে তারা। কৃষ্ণগঞ্জের বিজেপির যুবনেতা লিঙ্কন বিশ্বাস তাদেরই একজন। কেরল পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তে উঠে আসছে, বছরখানেক আগেই এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল লিঙ্কন। তাতেই ফুলেফেঁপে উঠেছিল সে।  


    কৃষ্ণগঞ্জে টিনের বাড়িতে থাকা ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাড়ির শিক্ষিত ছেলে লিঙ্কন। দ্রুত গতিতে তার আর্থিক উত্থান দেখে চোখ টাটিয়েছিল স্থানীয়দের। গ্রেপ্তার হতেই সবাই তাজ্জব। এখানেই শেষ নয়, বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যাঙ্কে রাখার ঝুঁকি এড়াতে শীতে কম্বল ব্যবসার ভুয়ো কোম্পানি খুলে সে। যার নাম ‘মহামায়া এগ্রো সার্ভিস’। সেই কোম্পানির কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই বলেই পুলিস জানতে পেরেছে। সেই ভুয়ো কোম্পানির ব্যবসার টার্ন ওভারকেই প্রতারণার কালো টাকাকে সাদা হিসেবে দেখানোর পরিকল্পনা করে লিঙ্কন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকার লোকজনের থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও ভাড়াও নিত। সেখানে প্রতারণার টাকার আর্থিক লেনদেন করত। 


    কৃষ্ণনগর-কৃষ্ণগঞ্জ রাজ্য সড়কের উপর চৌগাছা কালীমন্দিরের কাছে এক মাসে আগে নতুন গোডাউন ভাড়া নিয়েছিল লিঙ্কন।‌ রাস্তা দিয়ে গেলেই চোখে পড়বে বিশাল ফেস্টুন। বড় হরফে লেখা প্রতারকের নাম। খুচরো ও পাইকারি মূল্যে কম্বল বিক্রি করার বিজ্ঞাপন। শীতকালে কম্বলের ব্যবসা করার নামেই চার মাসের জন্য তা ভাড়া নেয়। সেইমতো গোডাউন মালিককে ভাড়ার সম্পূর্ণ টাকা অগ্রিমও জমা দিয়ে দেয়। গোডাউনের মালিক শুভদ্বীপ বাগ বলেন, ‘লিঙ্কন আমাদের গ্রামের ছেলে। কিন্তু ওর সঙ্গে সেভাবে পরিচয় ছিল না। আগে কী কাজ করত, তাও জানি না। মাস খানেক আগে আমার কাছে এসে বলে যে, শীতকালে কম্বলের ব্যবসা করবে। চার মাসের জন্য গোডাউন ভাড়া নেবে। ভাড়ার গোটা টাকাই অগ্রিমও দিয়েছিল। সেইমতো ব্যবসাও করছিল।’


    পুলিস জানতে পেরেছে, কয়েক মাস আগে কেরালার বিধবা মহিলা বেটি জোসেফকে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট› করে টাকা হাতিয়ে নেয় লিঙ্কন। স্বাভাবিকভাবেই সেই টাকা সরাসরি সে নিজের অ্যাকাউন্টে নেয়নি। কিন্তু কেরল পুলিসের হাতে অ্যারেস্ট হওয়ার মাস দেড়েক আগে রাজস্থানে যায় লিঙ্কন। সেখানে গিয়েই একটি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলে। পুলিসের অনুমান, প্রতারণার টাকা দিয়েই ব্যবসার জন্য গোডাউন ভাড়া নিয়েছিল সে।


    পুলিস জানতে পেরেছে, কেরলের বেটি জোসেফ ছাড়াও দেশজুড়ে আরও পাঁচটি সাইবার প্রতারণার ঘটনায় বিজেপির যুব নেতার নাম রয়েছে। এলাকার রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। সেটাকে হাতিয়ার করেই নাকি বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিত সে। পরিবর্তে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে মোটা টাকাও দিত। 


    কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এক আধিকারিক বলেন, ‘এত বড় অপরাধ লিঙ্কন একা করত, এটা ভাবাটা অস্বাভাবিক। আমাদের অনুমান ওর সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে।’
  • Link to this news (বর্তমান)