• পানায় ভর্তি ঝিল, দেখা নেই পরিযায়ী পাখিদের
    এই সময় | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, সাঁতরাগাছি

    শীত পড়লেও সাঁতরাগাছি ঝিলে দেখা নেই পরিযায়ী পাখির। ফলে পাখি দেখতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পক্ষীপ্রেমীরা।

    ফি বছর শীতে পরিযায়ী পাখির কলতানে ভরে ওঠে সাঁতরাগাছি স্টেশন লাগোয়া বিশাল ঝিল। হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে জড়ো হয় ওই ঝিলে। রাজ্য সরকারের বন দপ্তর এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ঝিলের মাঝখানে কচুরিপানা দিয়ে তৈরি ছোট ছোট ‘দ্বীপে’ পাখিরা বসত গড়ত।

    নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি হিমালয়ের পাদদেশ, মানস সরোবর এমন কী সাইবেরিয়া থেকেও এখানে খাবারের সন্ধানে চলে আসত। ৩৩ বিঘা এই ঝিলে দেখা যেত লেসার হুইসলিং ডাক, কমন টিল, গাডওয়াল, নর্দার্ন পিনটেল, গার্গেনি, ফেরুজেনাস পোচার্ড, পিগমি গুজ়, নাকটার মতো বিভিন্ন পাখি। পাশাপাশি পানকৌড়ি, মাছরাঙা, জলপিপি, নানা ধরনের বকের মতো দেশি পাখিও ভিড় করত।

    কিন্তু এ বছর সময়মতো ঝিল পরিষ্কার না হওয়ায় গোটা ঝিল কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। বসার জন্য দ্বীপ তৈরি না হওয়ায় পাখিরা এসেও অন্য জায়গায় উড়ে চলে যাচ্ছে।

    স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতি বছর দুর্গাপুজোর পরেই ঝিল পরিষ্কারের কাজে হাত দেয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কচুরিপানা দিয়ে ছোট ছোট দ্বীপ তৈরি করে দেওয়া ছাড়াও ঝিলের অতিরিক্ত কচুরিপানা তুলে নিয়ে পাখিদের চরে বেড়ানোর জায়গা করে দেওয়া হয়। সেই কাজটাই এ বার না হওয়ায় পাখিরা মুখ ফিরিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নর্দমার জল ঝিলে মিশে জলের দূষণমাত্রা বেড়ে গিয়েছে। এতে পাখিদের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। ঝিলের চারপাশে বহুতল বাড়ি নির্মাণ এবং ট্রেনের যাতায়াতের শব্দে অতিষ্ঠ পাখিরাও আর এখানে বসতে চাইছে না।

    কলকাতার কাছেই এই ঝিলে প্রতি বছর ক্যামেরা অথবা বাইনোকুলার হাতে পক্ষীপ্রেমীরা ভিড় জমান। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং নেচার ক্লাব থেকে সদস্যরাও পাখি দেখতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্ত রায় বলেন, ‘প্রতি বছর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ঝিল পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। তাই ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখা যায়।’

    তবে আশার কথা, দেরিতে হলেও নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকারের বায়োডাইভার্সিটি বোর্ড। গত কয়েক বছরের মতো তারা ঝিল পরিষ্কারের দায়িত্ব দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নেচার মেটস নেচার ক্লাবকে। তারা কচুরিপানা সরানোর কাজ শুরু করেছে। কিন্তু দেরি হওয়ার কারণে অনেক পাখি এসেও উড়ে যাচ্ছে। সংস্থার সদস্য লীনা চক্রবর্তী বলেন, ‘দেরিতে ঝিল পরিষ্কারের অনুমতি পাওয়ায় কাজ দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে চেষ্টা চলছে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কাজটা শেষ করার।’

    শীত জাঁকিয়ে পড়লেও কবে পরিযায়ী পাখির দল দেখা যাবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রকৃতি সংসদের পক্ষ থেকে পাখি গণনা করা হবে। তখন জানা যাবে প্রকৃত চিত্র।

  • Link to this news (এই সময়)