শান্তিনিকেতনে পার্কিংয়ের নামে চড়ুইভাতির আসর, সরব প্রবীণ আশ্রমিকরা
প্রতিদিন | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
দেব গোস্বামী, বোলপুর: শান্তিনিকেতনে পার্কিংয়ের নামে চড়ুইভাতির আসর নিয়ে সরব বাসিন্দা বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকরা। আবার পিকনিকে পর যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক- থার্মোকলের থালা গ্লাস পড়ে থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানান, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের উচিত পার্কিং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নজর দেওয়া। নাহলে তাঁরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভের পথে যেতে বাধ্য হবেন।
রতনপল্লীর মাঠ, পরিত্যক্ত কোয়ার্টারগুলি সামনে বাস, চারচাকার গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করে রমরমিয়ে চলছে রান্নাবান্না খাওয়া-দাওয়া। আর পর্যটকদের হই হুল্লোরের জেরে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। অভিযোগের তীর বোলপুর পুরসভার পুরকর আদায়কারী ও পার্কিং ঠিকাদার ব্যবসায়ী নাসির শেখের বিরুদ্ধে। যদিও পুরকর নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সদ্য একবছরের জন্য বিশ্বভারতীর পার্কিং পেয়েছেন ওই ব্যবসায়ী।
বিশ্বভারতীতে বছরভর পর্যটকদের ছোট বড় গাড়ি পার্কিংয়ের জন্যই টেন্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু বিতর্ক উঠেছে টেন্ডারে উল্লেখ না থাকা মাঠগুলির ব্যবহার নিয়েই। প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বভারতীর পার্কিংয়ের টেন্ডার দিলেও শান্তিনিকেতনের রতনপল্লী ও পরিত্যক্ত কোয়ার্টারগুলির সামনে বাস চারচাকার গাড়ি ঢুকিয়ে যত্রতত্র চড়ুইভাতির অনুমতি কে দিচ্ছেন?
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই বলেই সরব বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সকালে শান্তিনিকেতনের রতনপল্লী মাঠ ও কোয়ার্টারগুলির সামনে বাস পর্যটকরা পৌঁছে রান্নাবান্না খাওয়া-দাওয়া পাশাপাশি, হই হুল্লোরে মাতেন। কৃষ্ণনগর থেকে আসা তমাল দাস ও মৌসুমী মণ্ডল জানান, “পার্কিংয়ের জন্য ৫০০ টাকা ও কোয়ার্টারের সামনে রান্নাও খাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা দিয়েছি।” বাঁকুড়া থেকে আসা শ্যামলী মুখোপাধ্যায় ও সুব্রত শীলের কথায়, “পার্কিং লেখা আছে তাই গাড়ি রেখেছি। গাড়ি আনতে সাহায্য করেছে পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। পার্কিং কর্তৃপক্ষ হাজার টাকার বিনিময়ে ব্যবস্থাপনা থেকে রান্না করার সুযোগও করে দিয়েছেন।” যদিও বিতর্কিত পার্কিং ঠিকাদার ব্যবসায়ী নাসির শেখ জানান, “নিয়ম মেনেই বিশ্বভারতী থেকে টেন্ডার পেয়েছি তাই পার্কিং করেছি। যদি কোনও সমস্যা হয় বিশ্বভারতীর সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেব।”
রতনপল্লীর বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ মিত্র, সন্দীপ সিংহ, কবিদ চক্রবর্তীরা জানান, “পাঁচবছর পার্কিং ছিল না। হঠাৎই পার্কিংয়ের নামে পর্যটকদের হট্টগোলে সকলেই অতিষ্ঠ। বিশেষ করে শুক্র থেকে রবি সপ্তাহের এই তিনদিন। এখানে সাঁওতালি বিভাগ-সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিক, প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকদের বসবাস। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন পার্কিং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নজর দিক। নাহলে আমরা প্রতিবাদে স্মারকলিপি জমা, বিক্ষোভের পথে যেতে বাধ্য হবেন।” ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর আক্ষেপের সঙ্গে জানান, “বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের ২০০ মিটারের মধ্যেই পার্কিংয়ের নামে শান্তিনিকেতনে যা খুশি তাই চলছে। কেউ দেখাশোনা করার নেই। আমরা সমস্যায় পড়েছি।” বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানান, “এমন যদি ঘটে থাকে একেবারেই অবাঞ্ছিত ঘটনা।”