• আরজি কর কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রাই, সাজা ঘোষণা সোমবার
    News18 বাংলা | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • কলকাতা: দীর্ঘ ১৬২ দিনের অপেক্ষার পরে অবশেষে ঘোষণা হল আরজি কর মামলার রায়। নারকীয় ধর্ষণ ও খুনের মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকেই দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারকে। ২২০ নম্বর কোর্ট রুমে বিচারক অনির্বাণ দাস রায় ঘোষণা করেন।

    আরজি করের ঘটনায় সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই। একাধিক তথ্য পেশ করা হয় আদালতে। ওই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে উল্লেখ করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী।নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী অমর্ত্য দে রায় ঘোষণার আগে বলেছিলেন, ‘‘যে বা যাঁরা এই কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা প্রত্যেককেই যেন আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়।’’ তবে কী সাজা সঞ্জয় পাবে, তা জানা যাবে সোমবার।

    গত ৯ অগাস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সে সেমিনার রুমে উদ্ধার হল মহিলা চিকিৎসকের দেহ। অভিযোগ, চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তার পর পেরিয়েছে ১৬২ দিন। আজ ১৮ জানুয়ারি শনিবার সেই ধর্ষণ-খুনের মামলায় রায় ঘোষণা হল শিয়ালদহ আদালতে। তার সঙ্গে দেখে নেওয়া যাক একবার গত পাঁচ মাসের ধারাবিবরণী…

    ৯ অগাস্ট, ২০২৪: পড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন। হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগের চারতলার সেমিনার রুমে দেহ উদ্ধার U/S 64, 66, 103(1) BNS ধারাতে মামলা রুজু কলকাতা পুলিশের

    ১০ অগাস্ট: গ্রেফতার কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়র সঞ্জয় রাই

    ১৩ অগাস্ট: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের কাছে। ১৩ অগস্ট রাতেই এফআইআর করে সিবিআই

    ১৪ অগাস্ট: অভিযুক্তকে তুলে দেওয়া হয় সিবিআইয়ের হাতে। আরজি কর হাসপাতালে পৌঁছয় সিবিআই টিম

    ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর: তথ‍্য প্রমাণ লোপাট ও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল ও আর জি করের প্রাক্তন অধ‍্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে

    ৭ অক্টোবর: U/S 64,66,103(1) BNS ধারায় সঞ্জয় রাইয়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিবিআই

    ৪ নভেম্বর: চার্জ গঠন করা হয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে

    ১১ নভেম্বর: শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। রুদ্ধদ্বার কক্ষে ৫১ জন সাক্ষীর সাক্ষ‍্যগ্রহণ পর্ব চলে প্রায় দেড় মাস।

    ১৩ ডিসেম্বর: সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা না পড়ার কারণে জামিন পান অভিজিৎ ও সন্দীপ

    ৯ জানুয়ারি: ২০২৫ দীর্ঘ দুমাস ধরে বিচার প্রক্রিয়া চলার পর আদালত ঘোষণা করে ১৮ জানুয়ারি রায় দান

    ১৮ জানুয়ারি: শিয়ালদহ আদালতে আরজি কর ধর্ষণ-খুনের মামলায় রায় ঘোষণা

    এই ঘটনাপ্রবাহের ভিতরে রয়েছে অনেক অসূয়া, প্রতিবাদ, অসন্তোষ। রয়েছে শাসক-বিরোধী তরজা। এই আরজি করের ঘটনা নিয়েই ১৪ অগাস্ট রাতে নজিরবিহীন ‘আন্দোলন’ দেখেছে কলকাতা-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ। শহর থেকে গ্রাম, মফঃস্বল শহরতলিতে আবালবৃদ্ধবণিতা মাইলের পর মাইল জুড়ে মানববন্ধন, মশাল মিছিল করেছে। ভাঙচুর হয়েছে আরজি কর হাসপাতাল। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত জ্বলেছে বিদ্রোহের আগুন। সল্টলেক স্টেডিয়ামে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ বাতিল হয়েছে। ব্যতিক্রমী হলেও, হয়তো প্রথমবার অবরুদ্ধ হয়েছে বাইপাস। আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে টানা চলেছে অবস্থান। বৃষ্টি মাথায় পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ না-হওয়ায় শুরু হয়নি নবান্নে বৈঠক। কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকও বাতিল হয়েছে। ধর্মতলায় ‘আমরণ অনশনে’ বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। পুজোর মধ্যেও চলেছিল সেই কর্মসূচি। পরে বৈঠক হয় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে। সরানো হয় পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে। কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহার করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। দুর্গাপুজোর কার্নিভাল এবং দ্রোহের কার্নিভাল একই দিনে হওয়ায় ১৬৩ ধারা জারি করে পুলিশ। তা খারিজ হয়ে যায় আদালতে। ২১ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পরে আমরণ অনশন আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
  • Link to this news (News18 বাংলা)