• শাস্তি প্রত্যাহারের আবেদন, মেদিনীপুর হাসপাতালের সাসপেন্ড ৭ পিজিটির চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে
    প্রতিদিন | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • সম্যক খান, মেদিনীপুর: অবশেষে খোদ মুখ‌্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন মেদিনীপুর মেডিক‌্যালের সাসপেন্ড হওয়া সাত পিজিটি পড়ুয়া। তাঁরা কলেজ অধ‌্যক্ষ মৌসুমী নন্দীর মাধ‌্যমে মুখ‌্যমন্ত্রী ও মুখ‌্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়ে তাঁদের শাস্তি প্রত‌্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন। তাঁরা আশাবাদী, কিছু একটা ফল মিলবেই। কলেজ অধ‌্যক্ষ মৌসুমী নন্দীও বলেছেন, “মুখ‌্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পৌঁছেছে। দেখা যাক কী হয়।”

    এদিকে পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার ফের জিবি মিটিংয়ে বসেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে আর জঙ্গি আন্দোলন নয়, অনুরোধের পর্যায়েই নিজেদের দাবিদাওয়া পেশ করতে চাইছেন জুনিয়র ডাক্তারদের একটা বড় অংশ। সোমবারও মেদিনীপুর মেডিক‌্যাল কলেজে পিজিটিদের উপর শাস্তি প্রত‌্যাহারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান চলছে। গতকাল রাতেই তাঁরা জানিয়ে দেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও সদর্থক বার্তা না পাওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি জারি থাকবে। তবে সাধারণ রোগীদের পরিষেবার কথা ভেবে বিভিন্ন বিভাগ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আংশিক কর্মবিরতি কীভাবে হবে, তা ঠিক করা হবে। রোগী পরিষেবা বিঘ্নিত করতে চাইছেন না আন্দোলনকারীরা।

    মেদিনীপুর মেডিক‌্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সম্প্রতি প্রসূতি ও শিশুমৃত‌্যুর ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৩ জন জুনিয়র ও সিনিয়র মিলিয়ে চিকিৎসককে সাসপেণ্ড করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলাও দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে আছেন এই সাতজন পিজিটি ছাত্রছাত্রী। অন‌্যায়ভাবে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর শাস্তির খাঁড়া নামিয়ে আনার প্রতিবাদ করে জুনিয়র ডাক্তাররা ত্রুটিপূর্ণ স‌্যালাইনকে দায়ী করে আন্দোলনে নামেন। তবে তা ধোপে টেকেনি। স্বাস্থ‌্যদপ্তরের পাঠানো ১৩ সদ‌স‌্যর তদন্তকারী দলের তদন্তে চিকিৎসায় গাফিলতির একাধিক প্রমাণ মেলে।

    গত ৮ তারিখ যে পাঁচজন প্রসূতির সিজার করা হয়, সেসময় কোনও সিনিয়র ডাক্তার হাজির ছিলেন না। জুনিয়র ডাক্তার তথা পিজিটি ছাত্রছাত্রীরাই ওই সিজার করেছেন। যা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। এক সিনিয়র চিকিৎসক হাসপাতালে ডিউটিতে না থেকে ওই দিন প্রাইভেট নার্সিংহোমে সিজার করেছেন বলেও প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সব প্রমাণ পাওয়ার পরই খোদ মুখ‌্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে সাসপেন্ডের কথা ঘোষণা করেন। তবে প্রথম দিকে থেমে ছিলেন না জুনিয়র ডাক্তাররাও। তাঁরা ওই ঘটনার প্রতিবাদে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি ঘোষণা করে দেন। কিন্তু তা মানেননি অধিকাংশ জুনিয়র ডাক্তারই। তাঁরা কাজে যোগ দেন।

    এমনকী কর্মবিরতি ইস‌্যুকে কেন্দ্র করে আড়াআড়িভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েন জুনিয়র ডাক্তাররা। আরডিএ থেকে পদত‌্যাগ করে গত শুক্রবার মাঝপথেই জিবি বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের প্রধান মুখ অনীক দাস। তাঁরা কর্মবিরতির ঘোরতর বিরোধী। শেষমেশ একপ্রকার বাধ‌্য হয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে আংশিক কর্মবিরতি ঘোষণা করা হলে তাও কেউ মানেননি। সকলেই কাজ করে চলেছেন বলে জানিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। শেষমেশ শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ‌্যা পর্যন্ত অধ‌্যক্ষকে ঘেরাও করে রাখার পর রাতে মেডিক‌্যাল কলেজের বারান্দাতেই অবস্থানে বসে পড়ে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। সেই অবস্থান চললেও সুর নরম হয়ে গিয়েছে তাঁদের। মানবিকতার কারণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শাস্তি প্রত‌্যাহার না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে বলেই তাঁরা জানিয়েছেন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)