শৈশব সুরক্ষায় স্কুলে এবার ওয়ার্কশপ, সোশ্যাল মিডিয়ার কুপ্রভাব রোধে চালু হবে ‘মেন্টাল হেলথ ওয়ার্কশপ’
বর্তমান | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: সোশ্যাল মিডিয়া দুনিয়ার দরজা খুলে দিয়েছে। সহজেই তাতে ঢুকছে শৈশব। অল্পবয়সেই অনেক অজানাকে জানার সুযোগ থাকছে। তেমনই এর ভয়ঙ্কর দিকও রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে অনেকেরই শৈশব বিষাক্ত হয়ে উঠছে। কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে। শৈশব বাঁচাতে ‘মেন্টাল হেলথ ওয়ার্কশপ’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি দূর করা যাবে তা নিয়েই শিক্ষকরা স্কুলে পাঠ দেবেন। তার আগে প্রতিটি স্কুলের একজন শিক্ষককে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কীভাবে তাঁরা ছোটদের ‘মগজধোলাই’ করবেন, তার কৌশল শেখানো হবে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, ‘মেন্টাল হেলথ ওয়ার্কশপ’ চালু করা খুব প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। ছাত্রছাত্রীদের মন ভালো রাখার জন্য কিছু টিপস দেওয়া হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে বাড়ি থেকে শহরের একটি নামী বেসরকারি স্কুলের মেধাবী ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তার গলায় গামছা জড়ানো ছিল। পুলিস প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, ওই ছাত্র একটি গেমে আসক্ত ছিল। সেই খেলায় পরাজিত হলে মৃত্যুর পথে যেতে বাধ্য করা হয়। ওই ছাত্রটির ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। মেধাবী ছাত্রের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই মনে করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তির পাশাপাশি একাকিত্বের কারণেও অনেক অল্পবয়সি বিপথগামী হচ্ছে। আগে একান্নবর্তী পরিবারে কচিকাঁচারা অনেকের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেত। স্কুলের পর মাঠে খেলার সুযোগ থাকত। এখন সেই ‘দুনিয়া’ হারিয়ে গিয়েছে। ছোটরা বাড়িতে একা থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। স্কুলশিক্ষক বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অল্পবয়সিদের কাউন্সিলিং করা খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। তাদের অনেকেরই মানসিক অবস্থা ভালো নেই। বিশেষভাবে তাদের মগজধোলাই করা হলে ভালোই হবে। জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আরও জানা গিয়েছে, দু’দিন আগে জেলাশাসক স্বাস্থ্যদপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। প্রতিটি স্কুলে একজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর তিনি অন্যান্যদের পাঠ দেবেন। সেইমতো শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রতিদিনই কচিকাঁচাদের মন বোঝার চেষ্টা করবেন। সোশ্যাল মিডিয়ার খারাপ দিকগুলিও তুলে ধরবেন। গেমে আসক্ত হওয়ার পাশাপাশি ভিডিও দেখে অনেকে অনুকরণ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনে। এবার থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা মন খারাপ থাকলে তা ভালো করার টিপস দেবেন। জেলাশাসক বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই এই কর্মসূচি নেওয়া হবে।