• বিচ্ছেদের পর সন্তান নিতে পারেন মায়ের পরিচয়ও: হাইকোর্ট
    বর্তমান | ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: মাতৃগর্ভে সন্তানের জন্ম হলেও সে বেড়ে ওঠে পিতৃ পরিচয়ে। কিন্তু ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর এই বাধ্যবাধকতা উঠে যায়। স্বীকৃতি পায় ‘সিঙ্গল মাদারহুড’। শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, সন্তানের পরিচিতির ক্ষেত্রে বাবার নাম আবশ্যিক নয়। মায়ের পরিচয়ই যথেষ্ট। কিন্তু প্রশ্ন হল, বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সন্তান কি শুধুমাত্র মায়ের পরিচয় বহন করতে পারে? সম্প্রতি একটি মামলার সূত্রে বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়েছেন, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর সন্তান চাইলে শুধুমাত্র মাতৃ পরিচয় বহন করতে পারে। শুধু তাই নয়, মা যদি তফসিলি জাতি, উপজাতি কিংবা ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত হন, সেক্ষেত্রে সন্তানও সেই জাতিভুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। জন্মদাতা পিতা সাধারণ শ্রেণিভুক্ত (জেনারেল কাস্ট) হলেও সন্তানকে মায়ের জাতিভুক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। 


    কোন মামলার সূত্রে বিচারপতির এই নির্দশ? ২০০৩ সালে হাওড়ার আমতার বাসিন্দা রূপসী পাত্রের (নাম পরিবর্তিত) বিয়ে হয় উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা সৌরভ মিত্রর (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে। ২০০৫ সালে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন রূপসী। এরপর কয়েক বছর সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই এগয়। কিন্তু দিনে দিনে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন ও দূরত্ব তৈরি হয়। শেষ পরিণতি হয় ডিভোর্স। এরপর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে আমতায় বাপের বাড়িতে চলে আসেন রূপসী। ছেলেকে নিয়ে সেখানেই থাকতে শুরু করেন। রূপসীর দাবি, জন্মসূত্রে তিনি তফসিলি ‘তিয়ার’ সম্প্রদায়ভুক্ত। সেই সংক্রান্ত সার্টিফিকেটও তাঁর রয়েছে। বিবাহবিচ্ছিন্না রূপসী চান তাঁর নাবালক সন্তান কেবল মায়ের পরিচয়েই বাঁচুক। তাই ছেলেকে তফসিলি জাতিভুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ২০২২ সালের মে মাসে তিনি মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন জানান। অভিযোগ, সেই আবেদনের কোনও উত্তর আসেনি। ওই বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি জানতে পারেন, তাঁর আবেদন নাকচ হয়েছে। কারণ হিসেবে তাঁকে জানানো হয়েছে, আবেদনকারী মা তফসিলি জাতিভুক্ত হলেও জাতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পিতৃ পরিচয়ই নির্ণায়ক। এক্ষেত্রে সন্তানের পিতা যেহেতু জন্মসূত্রে জেনারেল কাস্ট, তাই আবেদনকারীর ছেলেকে তফসিলি জাতিভুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না। 


    কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সরাসরি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রূপসী। কিন্তু ততদিনে তাঁর ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গিয়েছেন। তাই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু আবেদনের গুরুত্ব খতিয়ে দেখে বিচারপতি সিনহা নির্দেশে জানান, বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলার সন্তান চাইলে শুধুমাত্র মায়ের পরিচয়ই বহন করতে পারেন। এমনকী, সন্তান কোন জাতিভুক্ত হবে, তা ঠিক করার ক্ষেত্রে পিতৃ পরিচয় নির্ণায়ক নয়। এক্ষেত্রে সন্তান যেহেতু সাবালক হয়ে গিয়েছেন, তাই তাঁকেই আবেদন করতে হবে মায়ের জাতিভুক্ত হওয়ার জন্য। সেই আবেদন যথাযোগ্য হলে আবেদনকারীকে মায়ের জাতিভুক্ত হওয়ার স্বীকৃতি দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। 
  • Link to this news (বর্তমান)