• ধর্ষণ-খুনে সন্দেহভাজন বাইক আরোহীরা নিখোঁজ, দামোদরের চরে অ্যাসিড দগ্ধ যুবতী কে? 
    বর্তমান | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: অন্ধকার থাকতেই নদীর চরে সব্জি তুলতে যান টোটন দাস (নাম পরিবর্তিত)। সেদিনও গিয়েছিলেন। বর্ষার সকালে কাঞ্চননগরের বাঁধের রাস্তায় বেশ খানিকটা জল জমে। আলো-আঁধারিতে বুঝেশুনেই হাঁটতে হচ্ছিল তাঁকে। কিছুটা এগিয়েই থমকে গেলেন টোটন। দামোদরের চরে কিছু একটা পড়ে আছে। আস্তে আস্তে এগলেন। চমকে উঠলেন সব্জি বিক্রেতা... বডি পড়ে আছে না? যুবতীর দেহ। ২০-২২ বছর বয়স হবে। আতঙ্কে চোখ সরিয়ে নিলেন তিনি। মুখটা অ্যাসিড ঢেলে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখের ভিতর ঠেসে দেওয়া হয়েছে অন্তর্বাস। গলায় জড়ানো ওড়না। আর শুধু মুখ কোথায়? নগ্ন শরীরের নীচটাও তো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে! চিৎকার শুরু করে দিলেন টোটন। মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলেন এলাকারই বাসিন্দা হিমাংশু পাল। তাঁকেই সামনে পেলেন সব্জি বিক্রেতা। হিমাংশুবাবু সব শুনে গেলেন ঘটনাস্থলে। চমকে উঠলেন দেখে। বর্ধমান শহরে খবর ছড়াতে দেরি হল না। 


    ২০২১ সালের ১ জুলাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই এল পুলিস। বলা ভালো, পুলিসের শীর্ষ স্তর পর্যন্ত নাড়িয়ে দিল এই ঘটনা। বারবার ঘটনাস্থলে গেলেন কর্তারা। মৃতদেহ যেখানে পড়েছিল, তার কিছুটা দূরেই মিলল একটি ফাঁকা বোতল। এক কর্তা নাকের কাছে আনলেন, পেট্রলের তীব্র গন্ধ। বুঝতে অসুবিধা হল না... পেট্রল দিয়েই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দেহ। ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হল পুলিস। আর একটা বিষয়েও সংশয় থাকল না—ধর্ষণের পর খুন হয়েছেন যুবতী। শুরু হয় ‘ক্লু’ খোঁজা। প্রশ্ন দুটো—প্রথম, কে এই যুবতী? দ্বিতীয়, খুনি কে বা কারা? মৃতার চেহারা পুড়ে এতটাই বীভৎস আকার নিয়েছে যে, কোনও থানায় ছবি পাঠানো যাচ্ছে না। শেষে স্কেচ করানো হল। সেটাই গেল সর্বত্র। পাশাপাশি চলছিল খুনির খোঁজ। নিশ্চয়ই তারা স্থানীয় কোনও পাম্প থেকে পেট্রল কিনেছে। আশপাশের সব পাম্পের ফুটেজ খতিয়ে দেখে একটি বাইকের উপর সন্দেহ গাঢ় হল। দু’জন সেখানে এসে বোতলে করে পেট্রল নিয়েছে। কিন্তু কারা তারা? সেই ফুটেজও ছড়িয়ে দেওয়া হল সর্বত্র। টেকনিক্যাল সাপোর্ট নেওয়া হল। তদন্তে নামল সিআইডিও। কিন্তু শত চেষ্টা করেও মৃতা এবং দুষ্কৃতী—কারও পরিচয় জানা গেল না। গঠন হল সিট। কিন্তু নিটফল? শূন্য। ধর্ষণ-খুনের মোটিভ কী? সেটাই জানতে পারল না তদন্তকারী টিম।


    ঘটনার পর চার বছর কেটে গিয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, নির্জনে সময় কাটানোর জন্য তখন বাইরে থেকে বহু যুবক-যুবতীই দামোদরের বাঁধে আসতেন। ফলে অপরিচিতদের আনাগোনা এলাকার মানুষের মনে দাগ কাটত না। হতে পারে, সেই সুযোগটাই নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ধর্ষণ, খুন আর তারপর প্রমাণ লোপাট করতে নৃশংসভাবে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া। এখনও দামোদরের চরেই সূত্র হাতড়ে বেড়াচ্ছে পুলিস।
  • Link to this news (বর্তমান)