বইয়ের টানে এত মানুষ আসেন! বিস্মিত বার্লিন লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের ডিরেক্টর
বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সুদীপ্ত রায়চৌধুরী, কলকাতা: থিম কান্ট্রি জার্মানিতে ঢোকার লাইনটা এঁকেবেঁকে বেশ কিছুটা গিয়ে থমকে গিয়েছে। ভিতরে ঠাসাঠাসি ভিড় কমারও কোনও লক্ষণ নেই। ঠিক যেন সুরুচি সঙ্ঘের পুজোমণ্ডপ। পায়ে পায়ে এগচ্ছে মানুষ। কিন্তু গতি বড়ই শ্লথ। আসলে তাদের চোখ আটকে নানা রঙের আলোয় সাজানো প্লাইউডের বইয়ের তাকে। সেখান থেকে বিভিন্ন বই নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতেই দেরি হচ্ছে। ভলান্টিয়াররা মাঝেমধ্যে একটু তাড়া দিচ্ছেন বটে, তার মধ্যেও কেউ কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত।
স্টলের ভিতের বাঁ-দিক দিয়ে ঢুকে ডানদিকে একটা জায়গায় বেশ কিছু চেয়ার পাতা। আলোচনা সভার জন্য। সেখানে একটা চেয়ারে বসে স্টলের ভিতর জমাট বাঁধা ভিড়ের উপর চোখ বোলাচ্ছিলেন লাভিনিয়া ফ্রে। বার্লিন লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের ডিরেক্টর। প্রথমবার এসেছেন কলকাতা বইমেলায়। আর সুবিশাল এই বই উৎসবে বইপোকাদের এমন উপচে পড়া ভিড় দেখে হতবাক তিনি। লাভিনিয়ার কথায়, ‘বইয়ের টানে যেভাবে এত মানুষ এক জায়গায় ছুটে এসেছেন, লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন... আমি বিস্মিত। শিহরিতও বটে। সবচেয়ে ভালো লাগল একটা জিনিস দেখে যে, বইপ্রেমী মানুষজন এই মেলায় এসে শুধু যে বই কিনছেন, এমনটা নয়। তাঁরা বই কিনছেন, স্টলের ভিতরেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন আবার একে অপরের সঙ্গে বই নিয়ে আলোচনাও করছেন।’
অডিও বুক, পিডিএফের রমরমা বাজারে বিশ্বজুড়ে বই-পাঠকের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে বলে আলোচনা চলছে গত কয়েক বছর ধরেই। সেই আলোচনার মধ্যেও বইমেলায় এই উপচে পড়া ভিড়ে কিন্তু আশার আলো দেখছেন লাভিনিয়া। তিনি জানালেন, ‘এর জন্য যেমন বই পড়ার অভ্যাসকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে, তেমনই তা পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে কলকাতার মতো বইমেলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, আমাদের নিজেদের জন্যই যে বই পড়া প্রয়োজন, সেটাও বোঝাতে হবে। কিছুদিন আগে দুবাইতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বই পড়ার প্রসঙ্গটি উঠে এসেছিল। সেখানে এক বক্তা দারুণ একটা কথা বলেছিলেন, বই পড়লে মেধার বিকাশ হয়, একথা তো সবাই জানি। কিন্তু প্রতিটি বইয়ে পাঠকরা নিজের সঙ্গে কিছু না কিছু মিল খুঁজে পাবেনই, সেটাই বই পড়ার আসল মজা। এই বিষয়টা ডিজিটাল বনাম ছাপার অক্ষরের নয়। যা লেখা হচ্ছে, পাঠক সেটা পড়ছে কি না, এটাই আসল প্রশ্ন।’ আসলে ‘গল্প’টা কী, সেটাই সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। মাধ্যম বদলালেও গল্পের প্রভাব কিন্তু ছিল-আছে-থাকবে। বয়সের গণ্ডি ভেঙে পড়ার অভ্যাস যাতে সবার মধ্যে ছড়িয়ে যায়, তার জন্যই এই ধরনের বইমেলা বা সাহিত্য উৎসব প্রয়োজন।
স্টলের ভিতরে ভিড় ততক্ষণে কিছুটা কমেছে। ফের ঢুকতে শুরু করেছেন নানান বয়সের মানুষজন। বইপোকাদের এই উৎসাহই বইয়ের আসল রসদ। বইমেলারও।