প্রাঙ্গণ উপচে ভিড়, শেষবেলার ছাড়ে দেড় হাজারি বই ৬০০তে
বর্তমান | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: এই বইমেলায় শেষবারের মতো প্রবেশ-দরজা বন্ধ হয়েছে রাত ৯টায়। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টা ১৪ মিনিটের ছবি দেখিয়ে দিল, এ মেলা শেষ হয়েও হয় না শেষ। সাত নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশের জন্য বইপ্রেমীদের লাইন প্রাঙ্গণ উপচে চলে গেল করুণাময়ী মেট্রো স্টেশনের সিঁড়িতে। ভিড় ঠেলে, আর দু’হাত ভর্তি ব্যাগ বয়ে যাঁরা ওই সময় বেরলেন, তাঁদের ফেলে আসা সেই শূন্যস্থান ভরাটও হয়ে গেল মুহূর্তে। প্রথম কারণ, শেষবারের মতো নতুন বইয়ের গন্ধ নেওয়া। আর দ্বিতীয়, অন্তিম লগ্নের বিপুল ছাড়।
এদিন মেলার গেট খোলার আগে থেকে বইপ্রেমীদের জটলা চোখে পড়েছে মেলা প্রাঙ্গণের কোনায় কোনায়। আর বিকেল সাড়ে ৩টের পর থেকে জনস্রোতে শামিল কোচবিহার থেকে ঝাড়গ্রাম। সন্ধ্যা ৬টার বইমেলা প্রাঙ্গণ যেন মিনি ব্রিগেড। দেজ, পত্রভারতী, শিশু সাহিত্য সংসদ, অক্সফোর্ড, জার্মানির স্টলের সামনে লম্বা লাইন। কখন তাঁরা স্টলে ঢুকতে পারবেন, সে ব্যাপারে সন্দেহ জাগলেও উৎসাহে ভাটা পড়েনি। বরানগরের পঞ্চাশোর্ধ্ব শোভা সরকার তো বলেই ফেললেন, ‘যতক্ষণ সময় লাগে লাগুক, শেষ দিনে ছাড়াছাড়ি নেই।’ এর অন্যতম কারণ কি বাড়তি ছাড়ের ডাক? বেশ কয়েকটি চটের ব্যাগ রাবার ব্যান্ড মুড়িয়ে মেলায় এসেছেন মাঝবয়সি সরকারি কর্মী সৌমাংশু নস্কর। স্টল থেকে সারি সারি বই কিনছেন, আর একের পর এক ব্যাগ ভরে ফেলছেন। শরৎ সমগ্রের প্রতি খণ্ডের দাম ছাপা অক্ষরে ৩৫০ টাকা। কিন্তু মেলার শেষ লগ্নে বিক্রি হল ১৫০ টাকায়। কথামৃত সহ রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের বইয়ের প্যাকেজ বিক্রি হল ৪৫০ টাকায়। হাঁক শোনা যাচ্ছে... ‘দেড় হাজারের বই ৬০০ টাকায়।’ তাতে মিলছে গল্প, উপন্যাস, কবিতা একসঙ্গে। শিশুদের ৬টা বই মাত্র ১০০। চাকরির পরীক্ষার বইয়ে তো শেষবেলার ছাড় ৩৫ শতাংশ। আবার কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের ৫৫০ টাকার বই বিকিয়েছে ২৫০ টাকায়। আমেরিকান লাইব্রেরির মেম্বারশিপ ৬৫০ টাকার জায়গায় নেওয়া হল ৪৫০ টাকা। এক প্রকাশকের কথায়, ‘বইমেলার প্রথম দিনগুলিতে ১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বই বিক্রি হয়েছে। তবে শেষ দিনে স্টক খালির জন্য অনেকেই ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেন।’ কিছু হলেও লাভ থাকছে প্রকাশকদের। আর বেশিটা পাঠকের। ২৮ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি—এভাবেই ১৩ দিনের সফর শেষ করল কলকাতা বইমেলা। এযাবৎকালের নিরিখে রেকর্ড গড়ে বিক্রি হল ২৫ কোটি টাকার বই। গত বছরের থেকেও ২ কোটি টাকার বেশি। ২৭ লক্ষ দর্শক, আর ভরপুর উন্মাদনা। শেষের দিন, রবিবারটা হয়ে উঠল ক্রেতা, প্রকাশক, মেলার আয়োজক, প্রশাসনের কর্তা থেকে পুরসভার কর্মীদের কাছে আবেগের বিস্ফোরণের সমান। কেউ বললেন, ‘দুর্গোৎসবের শেষ রাতের মতো বইমেলার শেষ দিনেও স্টলে স্টলে ঢুঁ দেওয়ার আনন্দের ভাগ হয় না।’ আবার কারও কথায়, ‘এবছর কেনা বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতেই পরের বছরের অপেক্ষা শুরু।’ এ যেন ৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার সমাপ্তির ঘণ্টা বাজার আগেই আহ্বান জানানো প্রাক সুবর্ণ জয়ন্তী বছরকে। জানান দেওয়া, বইপ্রেমীরা ফুরিয়ে যায়নি। -নিজস্ব চিত্র