৭ হাজার টাকায় ভাড়া খাটছে ২৫ হাজার ফার্মাসি লাইসেন্স!
বর্তমান | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: ভাড়ায় খাটছে প্রায় ২৫ হাজার ফার্মাসি লাইসেন্স। সরকারি বা প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক, দন্ত চিকিৎসক, গ্রামীণ ডাক্তার, প্রোমোটার-ডেভেলপার, ছোট-মাঝারি প্রাইভেট ফার্মের চাকুরিজীবী, এমনকী বিভিন্ন ফার্মাসি কলেজের শিক্ষক-অধ্যাপকরা রয়েছেন তালিকায়। ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ না করলেও নিজের প্রথম জীবনে করা ফার্মাসি রেজিস্ট্রেশন (চলতি কথায় লাইসেন্স) সার্টিফিকেট নবীকরণ করাতে ভুলছেন না কেউই! কারণ একটাই। মাসে ৬-৭ হাজার টাকায় বা এককালীন ১২ মাসের হিসেবে বিভিন্ন ওষুধের দোকানে ভাড়ায় খাটছে তাঁদের ফার্মাসি লাইসেন্স। ই- ভেষজ চালুর পর থেকে একটি লাইসেন্স বিভিন্ন ওষুধের দোকানে ভাড়া খাটানো বন্ধ করে দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল। কিন্তু এই বেআইনি কাজ বহু জায়গায় চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।
সূত্রের খবর, ফার্মাসি পাশ ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি দোকানে ব্যবহারের অনুমতি দেন। স্বাস্থ্যদপ্তরের ই-ভেষজ পোর্টালে তুলে দেওয়া হয় সেই নম্বর। চাকরিবাকরির কঠিন বাজারে এই ‘উপরি’ ছাড়ছেন না একদা ফার্মাসি নিয়ে পড়াশোনা করা হাজার হাজার মানুষ। এমনকী, ফার্মাসির বহু স্নাতক, স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা চলাকালীনই নিজেদের ডিপ্লোমা বা ডিগ্রির লাইসেন্স একইভাবেই ভাড়া খাটাতে নেমে পড়েছেন।
২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে প্রায় ৩০ হাজার ফার্মাসিস্ট আছেন। তবে কাউন্সিল সদস্যদের একাংশের দাবি, এই সদস্য সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। কারণ, এখন রাজ্যজুড়ে প্রায় ৩০০টি ফার্মাসি কলেজ! সদ্য নির্বাচিত এক সদস্য বলেন, ‘ভোটার লিস্ট মেলাতে গিয়ে আমরা সার্টিফিকেটের নম্বর ধরে ধরে ভুয়ো না আসল দেখতে গিয়েই এই কাণ্ড সামনে আসে। প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন, আবার ফার্মাসি লাইসেন্স নবীকরণ করিয়ে ভাড়ায় খাটাচ্ছেন—এরকম অনেক উদাহরণ সামনে আসে। রাজ্য ফার্মাসি কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য রামেশ্বর হালদারের অভিযোগ, ‘এর ফলে সদ্য পাশ ফার্মাসিস্টদের চাকরির বাজার সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে।’ ফার্মাসি কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সদস্য দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘আগের থেকে অনেকটাই কমানো গিয়েছে এই প্রবণতা।’ ওষুধের দোকানদারদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিডিএ) মুখপাত্র শঙ্খ রায়চৌধুরীর দাবি, ‘আগে এমন ঘটত। এখন ১০ শতাংশও হয় কি না সন্দেহ। স্পষ্ট বলেছি, এমন অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকলে সংগঠন পাশে থাকবে না।’ তৃণমূলপন্থী ফার্মাসিস্ট সংগঠনের অন্যতম নেতা বিজয় বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা রাজ্য ফার্মাসি কাউন্সিলকে চিঠিতে জানিয়েছিলাম, লাইসেন্স নবীকরণের সময় নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা লিখিয়ে নিলে এই অসাধু কাজ কমবে।’ স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। নিয়ম কী বলছে আর বাস্তবে কী হচ্ছে? প্রথমত, লাইসেন্স নবীকরণের ফর্মে ‘প্রফেশনাল অ্যাড্রেস’ অংশটি পূরণ করতে হয়। কিন্তু এ নিয়ম কার্যত নাম কা ওয়াস্তে আছে। ভাড়া খাটানোর কারিগররা নির্দ্বিধিায় সেখানে লিখে দিচ্ছেন ‘নিল’ (অর্থাৎ কোনও কাজ করেন না)। দ্বিতীয়ত, ‘ফার্মাসি প্র্যাকটিস রেগুলেশন ২০১৫’-তে স্পষ্ট বলা আছে, ফার্মাসিস্টের উপস্থিতি ছাড়া তাঁর লাইসেন্স ব্যবহার করা বেআইনি। বাস্তবে রমরম করে চলছে এই কারবার।