'মেয়ের' বিয়ে দিতে থানার ভোল পাল্টে দিলেন ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক, তারিফ করে গেলেন ঊর্দ্ধতন কর্তারা...
আজকাল | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক ঝলক দেখলে মনে হবে যেন পাঁচতারা কোনও বিয়েবাড়ি। 'মেয়ের' বিয়ে দিতে একদিনের জন্য মুর্শিদাবাদের কান্দি থানার ভোল পাল্টে দিলেন থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মৃণাল সিনহা। তবে 'ব্যক্তিগত' কাজে থানায় বিয়ের আসর বসালেও স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে জেলা পুলিশ প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্তা সেই বিয়েতে পাত পেড়ে খেয়ে গেলেন আর প্রশংসা করে গেলেন মৃণালে। রবিবার দুপুরের এমন এক অবাক কাণ্ডে শোরগোল পরে গিয়েছে জেলা জুড়ে।
থানায় বিয়ের আসর বসানোর প্রস্তুতি শুরু প্রায় দিন ১০-১২ আগে। সেদিন কান্দি থানার 'পেট্রলিং ডিউটি'তে থাকা কয়েকজন আধিকারিক লক্ষ্য করেন কিছু ব্যক্তি কান্দির বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে এক অনাথ মেয়ের বিয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা তুলছেন। থানার বড়বাবুর কানে ঘটনার খবর যেতেই ডেকে পাঠান তাঁদের সকলকে। গোটা ঘটনা শোনার পর মৃণাল সিদ্ধান্ত নেন অনাথ মেয়ের বাবা হবেন তিনি। বিয়ের আসর বসবে তাঁর কর্মক্ষেত্র কান্দি থানায়। গোটা ঘটনার কথা নিজের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের জানাতেই মিলে যায় তাঁদের অনুমোদন।
খড়গ্রাম থানার সুরখালি এলাকার বাসিন্দা সারজিনা খাতুন। মাত্র চার বছর বয়সে হারিয়েছিলেন নিজের মাকে। তারপর থেকে বাবা ভিক্ষে করে সংসার চালাতেন। বছর তিনেক আগে বাবাও মারা যান। তারপর থেকে পিসির বাড়িতেই থাকছিলেন সারজিনা। খড়গ্রামের সুন্দরপুরে সার্জিনার বিয়ে ঠিক হলেও অর্থের অভাবে তাঁর পরিবারের লোকজন বিয়ের আয়োজন করতে পারছিলেন না।
দিয়ারুল শেখ নামে খরগ্রাম থানার এক ব্যক্তি বলেন, ''সুন্দরপুরের এক যুবকের সঙ্গে সারজিনার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আমরা গ্রামবাসীরা এই বিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছিলাম। কান্দি থানার আইসি মৃণাল সিনহা গোটা বিষয়টি জানার পর আমাদেরকে কারও কাছ থেকে টাকা তুলতে বারণ করেন। তিনি বলেন, সারজিনার বাবা হয়ে তিনি বিয়ের সমস্ত আয়োজন করবেন এবং কন্যাদান করবেন।'' একমাত্র মেয়ের বিয়ের জন্য আজ সকাল থেকে খাকি পোশাক ছেড়ে নীলের উপর সাদা চিকনের কাজ করা পাঞ্জাবি এবং ধুতি পড়ে 'কন্যাদায়গ্রস্ত' পিতার মত ঘুরে ঘুরে জামাই বাড়ির লোকেদের সব কিছু নিজে তদারকি করেছেন মৃণাল। বিয়ের আসরে হাজির হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার মজিদ ইকবাল খান, কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার, কান্দি পুরসভার চেয়ারম্যান জয়দেব ঘটক-সহ পুলিশ প্রশাসনের আরও একাধিক শীর্ষ আধিকারিক। সকলেই দু'হাত তুলে আশীর্বাদ করে গেছেন নবদম্পতিকে আর আকুন্ঠ প্রশংসা করেছেন এই অভিনব উদ্যোগের। রবিবার 'বাবা' হিসেবে 'মেয়ের' বিয়েতে নতুন জামাইকে উপহার দিয়েছেন নতুন খাট, বিছানা, আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ ,আলমারি এবং বেশ কিছু সোনার গয়না। বিয়ের সকালে আমন্ত্রিতদের জন্য ছিল কচুরি, মিষ্টি, আলুর দম। দুপুরে কব্জি ডুবিয়ে সকলে খেয়েছেন খাসির মাংস দিয়ে ভাত, দই, মিষ্টি, আইসক্রিম, চিংড়ি মাছের মালাইকারি সহ একাধিক পদ।
তবে অশ্রুসজল নয়নে 'কন্যা'কে বিদায় দেওয়ার পর আলাদা করে কিছু বলতে রাজি হননি আইসি মৃণাল সিনহা। কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, ''আমরা নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করলাম। তাঁদের যে কোনও অসুবিধায় পুলিশ প্রশাসন এবং আমরা সর্বদা পাশে থাকব।''
'বাবা'কে একটু আড়াল করে সারজিনা নিজের চোখের জল মুছে বলেন, ''কান্দি থানার আইসি আজ 'বাবা' হিসেবে আমার কন্যাদান করেছেন। বিয়েতে উপহার দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন। স্বপ্নেও কোনও দিন ভাবিনি এত বড় করে আমার বিয়ে হবে।''