সংবাদদাতা, রামপুরহাট: বাড়ি তো নয়, পাখির বাসা। ছেঁড়া ত্রিপল, ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের ডাল কুড়িয়ে এনে তাঁবুর মতো খাটিয়ে বসবাস। কুয়াশায় শিশির বিন্দু টপটপ করে ফুটো ত্রিপল দিয়ে গায়ে পড়ে। হিমেল হাওয়ায় গা ঠান্ডায় জমে যায়। শীত নিবারণের বস্ত্র নেই তাঁদের। ঠিকমতো খাবারও জোটে না। রামপুরহাট শহরের ছ ফুঁকো রাস্তা দিয়ে স্টেশন যাওয়ার ডানদিকে রেলের জায়গায় নিদারুণ অবস্থায় বসবাস করছেন এক বৃদ্ধ দম্পতি। অথচ নজর পড়ছে না পুরসভার। ওই দম্পতি জানান, একটা আশ্রয় পেলে শেষ জীবনে একটু শান্তি পাব।
লক্ষ্মী মার্ডি ও তাঁর স্বামী গোপিন হাঁসদা। বাড়ি মালদার হবিবপুরে। সেখানে তাঁদের তিন বিঘে জমিও ছিল। ১৪-১৫ বছর আগে বন্যায় তাঁদের মাটির বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ভিটেবাড়ি ছেড়ে নিঃসন্তান ওই দম্পতি নতুন আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। ভিক্ষে করতে করতে তাঁরা চলে আসেন রামপুরহাটে। এরপর রেলের জায়গায় বসবাস করতে থাকেন। সকাল হলে লক্ষ্মী বেরিয়ে পড়েন ভিক্ষে করতে। আর গোপিন যাত্রীদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের জলের বোতল কুড়িয়ে তা বিক্রি করে সামান্য আয় করেন। তা নিয়ে দু’বেলা ঠিকমতো খাবারও জোটে না তাঁদের। সম্প্রতি রেলের উচ্ছেদ অভিযানে জরাজীর্ণ আশ্রয়স্থলটিও ভেঙে দেওয়া হয়। স্টেশনের প্লাটফর্মে ঠাঁই নেবেন, তারও উপায় নেই। রাতে প্লাটফর্মে ভিক্ষুক, ভবঘুরেদের ঠাঁই নেই। পরবর্তী সময়ে ফের রেলের জায়গায় ছেঁড়া ত্রিপল, গাছের ডাল দিয়ে জীর্ণ তাঁবু খাটিয়ে থাকছেন তাঁরা।
অথচ বছর দুয়েক আগে এই শহরেই শেল্টার ফর আরবান প্রকল্পে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সহায় সম্বলহীনদের জন্য জি প্লাস থ্রি ভবন গড়ে তুলেছে পুরসভা। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্ষণিকা’। স্টেশন চত্বর, রাস্তার ধারে থাকা অসহায় মানুষদের নিয়ে এসে পুরসভা এই ভবনে আশ্রয় দিয়েছে। পরিবার থেকে বিতাড়িত এমন স্থানীয় কয়েকজনও এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে খাবার দেওয়ার পাশাপাশি স্বনির্ভরশীল হতে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই অসহায় দম্পত্তির দিকে নজর নেই পুরসভার। স্থানীয় শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসা করেন। তাঁদেরও নজর পড়ে না।
লক্ষ্মীদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, জীবনের ১৫টা বছর স্বামীর সঙ্গে এভাবে দিন কাটাচ্ছি। থাকতে খুবই কষ্ট হয়। খাবারও ঠিকমতো জোটে না। গ্রামের জায়গাও দখল হয়ে গিয়েছে। একটা আশ্রয় পেলে শেষ জীবনে শান্তি নিয়ে আমরা মরতে পারব। আপনাদের জন্য তৈরি ভবনে যাচ্ছেন না কেন? উত্তরে দম্পতি বলেন, জানিই না। কেউ আমাদের নিয়ে যেতে আসেনি। আশ্রয়ে ঠাঁই মিললে একটু শান্তি পাব।
পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন ভকত বলেন, অসহায় ওই দম্পতির বিষয়টি জানা ছিল না। ক্ষণিকায় বর্তমানে ১২ জন রয়েছেন। সেখানে ৫০ জনের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ওই দম্পতিকে তুলে এনে ক্ষণিকায় থাকার ব্যবস্থা করা হবে।