• দেখতে হুবহু এক! বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ঘাটালের মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্রে সেলিব্রিটি তিন বোন
    বর্তমান | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ঘাটাল: মাধ্যমিক পরীক্ষা সেন্টারে এখন ‘সেলিব্রিটি’ তেমজ বোন। হবহু এক দেখতে তিন বোনই। তাদের দেখতে ঘাটাল ব্লকের মার্ক্স মৃত্যু শতবার্ষিকী বিদ্যালয় সেন্টারের গেটে প্রত্যেক দিন অধীর কৌতূহল নিয়ে বসে থাকছেন অভিভাবকরা। ছেলেমেয়েদের সেন্টারে দিতে গিয়ে ‘কিউট’ তিন বোনকে এক ঝলক দেখাটাও যেন তাঁদের বিশেষ প্রাপ্তি। আর সহ পরীক্ষার্থীরা রসিকতা করে বলে, তিন বোনই আদতে ‘কপি পেস্ট’!


    ২০০৮ সালের জুন মাসে জন্ম তিন বোনের। সিজারিয়ান ডেলিভারিতে দু’মিনিটের ব্যবধানে ভুমিষ্ঠ  হয়েছিল তারা।  হুবহু একই রকম দেখতে। আলাদা করতে তখন বেশ বেগ পেতে হয়েছিল চিকিৎসক ও নার্সদের। শেষে ওজনের ভিত্তিতেই বড়, মেজো এবং ছোট বলে পরিচয় দেওয়া হয়।  ট্রিপলেট বোনের নাম দেওয়া হয়   দিশা, নিশা ও রিশা।  মা মুনমুন মাইতি হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘সৃষ্টি থেকেই সবকিছু ভাগাভাগি করে নিয়েছে ওরা। মায়ের গর্ভ হোক বা বুকের দুধ, সবেতেই তিনজনের সমান ভাগ। আর ওদের প্রতি আমার ভালোবাসাটাও সমান-সমান।’ 


    শ্যামসুন্দরপুর রাজকুমার হাইস্কুলের টিআইসি তরুণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘তিনজনেই খুব ভালো ছাত্রী, তা ছাড়া দারুণ শৃঙ্খলাবদ্ধ। এত নম্র ও মেধাবী ছাত্রী খুব কম দেখা যায়।’ একই প্রতিক্রিয়া এলাকার এক শিক্ষক সৌগত শাসমলেরও। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে তিন কন্যার বাড়ি বিগত দেড় দশক ধরে এলাকার ‘ল্যান্ড মার্ক’ হয়ে গিয়েছে।’ 


    শিক্ষক থেকে শুরু করে গ্রামের মানুষ, মাঝেমধ্যে তিন বোনকে গুলিয়ে ফেলেন। রাস্তা দিয়ে দিশা হেঁটে গেলে বলেন, নিশা যাচ্ছে। আবার নিশা হেঁটে গেলে বলে রিশা! এমন বিভ্রান্তিতে বেশ মজাও পায় তারা। হাসতে হাসতে বলে, ‘অনেক সময় স্কুলে স্যাররা ভুল করে একে অন্যের নাম ধরে ডাকেন। তখন আমরা একসঙ্গে হেসে ফেলি।’


    তিন বোনেদের মধ্যে সম্পর্কও গভীর। একেবারে অভিন্ন হৃদয়। তাদের খাওয়া, ঘুমনো, টিউশনি ও স্কুলে যাওয়া, মেলা কিংবা খেলা— সবকিছু একসঙ্গে। কেউ যদি একটু পিছিয়ে পড়ে, অন্য দুজন থেমে অপেক্ষা করে। তারা বলে, আমাদের অন্য কোনও বন্ধুর দরকার হয় না। তবে একসঙ্গে বড় হলেও, তিনজনের স্বপ্ন কিন্তু আলাদা। দিশা জীবন বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়, নিশা ভূগোল আর রিশা ইতিহাস। একসঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলেও ভবিষ্যতের পথ আলাদা করেই বেছে নিয়েছে তারা।


    নিশাদের বাবা তপন মাইতি কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে থাকেন। কিন্তু মেয়েদের প্রতি তার ভালোবাসা অটুট। তিনি তিন কন্যার জন্য সব কিছুই সমান আনেন। তপনবাবু বলেন, ‘ওরা নিজেদের মতো করে বড় হোক, এটাই চাই।’
  • Link to this news (বর্তমান)