ধুমধাম করে দুঃস্থ কন্যার বিয়ে কান্দি থানায়, অভিভাবক আইসি
বর্তমান | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, কান্দি: থানাতেই বসল বিয়ের আসর। ছাতনাতলায় চার হাত এক করলেন পুলিস কর্মীরাই। রবিবার ঘটনাটি ঘটে কান্দি থানায়। খড়গ্রামের বাবা-মা হীন এক কন্যাকে পাত্রস্থ করলেন কান্দি থানার আইসি। বিয়ের শেষে চোখ ছলছলও করে উঠল ওই পুলিস অফিসারের। এদিন দুপুর গড়াতেই থানা চত্বরে বিয়ের আসর বসে। সেখানে খড়গ্রাম থানার সুরখালি গ্রামের পাত্রী সার্জিনা খাতুন বেনারসি পরে কন্যার সাজে বসে রয়েছেন। সঙ্গে তাঁর আত্মীয়স্বজন। কিছুক্ষন পরেই সেখানে চলে আসেন খড়গ্রাম থানার কালিদাসপুরের পাত্রপক্ষও। পাত্র মালদার শেখ। পেশায় চাষি। সঙ্গে পাত্রের বাবা সহ আত্মীয়রা। সব মিলিয়ে জমে উঠেছিল বিয়ের আসর। পুলিসের পক্ষ থেকে পাত্র ও পাত্রী পক্ষের লোকজনদের অতিথি অ্যাপায়ন করা হয় ফল মিষ্টি দিয়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোটবেলাতেই সার্জিনার মা মারা গিয়েছেন। এরপর প্রায় তিনবছর হল বাবাকেও হারিয়ে ফেলেন তিনি। এমন অবস্থায় এক পিসির কাছে মানুষ হচ্ছিলেন পাত্রী। কিন্তু সেই পিসির ঘটা করে বিয়ে দেওয়ার মতো উপায় ছিল না। এমন অবস্থায় প্রায় ১৫দিন আগে কান্দি থানায় ভাইঝির বিয়ের সাহায্য চাইতে আসেন পিসি। সেইসময় কান্দি থানার আইসি মৃণাল সিনহা তাঁকে আবেদন করেন, সার্জিনাকে পিতার মতো কন্যাদান করতে চান। যতটা সম্ভব অন্যান্য সাহায্যও করবেন।
সেই হিসেবে এদিন কান্দি থানা চত্বরেই বিয়ের আসর বসে। এরপর ইমাম ডেকে বিয়েও হয়। বিয়ে সম্পন্ন হলে সেখানেই ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল পুলিসের পক্ষ থেকে। সাদাভাত, ডাল, তরকারি, সহ মাছ, মাংস, রসগোল্লা। শেষপাতে অবশ্যই আইসক্রিম। আর তা বেশ তৃপ্তি করে খেলেন প্রায় ৩০০ জন অতিথি। এরমধ্যে পাত্রপাত্রীর আত্মীয় ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দাদেরও পুলিসের পক্ষ থেকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। পাত্রী সার্জিনা জানান, নিজের বাবাকে হারিয়ে ফের নতুন করে বাবা পেলাম। পুলিসের পক্ষ থেকে গয়না সহ খাট, আলমারি, কাপড়চোপড় সব দেওয়া হয়েছে। আমার জীবনের এটি একটি স্মরণীয় দিন হয়ে রইল। পাত্র মালদার শেখ বলেন, আমি তেমন রোজগার করতে পারি না। তাই সাদামাটা ভাবে বিয়ে সারতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কান্দি থানার পুলিস সবটাই পাল্টে দিয়েছে। এমন অনুষ্ঠান করে বিয়ে আমরা করতে পারতাম না। পাত্রের বাবা সাহেব শেখ বলেন, আমরা কান্দি পুলিসের কাছে চরম কৃতজ্ঞ। অভিভাবক হিসেবে এই থানার পুলিস যেভাবে পাত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে আমরা গর্বিত। যদিও কান্দি থানার আইসি মৃণাল বাবু অবশ্য এনিয়ে কিছু জানাতে চাননি। শুধু ছলছল চোখে বলেন, ঈশ্বর যা চেয়েছেন তাই হয়েছে।