জ্ঞানালয় কর্মসূচির জন্য স্কচ পুরস্কার পেল উত্তর দিনাজপুর
বর্তমান | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: ‘জ্ঞানালয়’ কর্মসূচির আওতায় জেলার দু’শোর বেশি স্কুলে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো তৈরির জন্য ‘স্কচ’ অ্যাওয়ার্ড পেল উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মান তুলে দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন দ্বিতীয়বার এই সম্মানের অধিকারী হল। এর আগে ‘সক্ষম’ প্রকল্পে কৃত্রিম অঙ্গ বিলি ও বিকলাঙ্গদের অধিকার সুরক্ষার জন্য ‘স্কচ’ অ্যাওয়ার্ড পায় জেলা প্রশাসন।
প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক কাজের জন্য প্রতি বছর এই বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়ে থাকে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট কাজের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর, তথ্য যাচাই করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মীনা জেলার গ্রামীণ এলাকার দু’শোটির বেশি স্কুলে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা নেন। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল, গ্রামীণ স্কুলের পড়ুয়াদের শহরের পড়ুয়াদের সমকক্ষ করে তোলা। এই কর্মসূচির পোশাকি নাম জ্ঞানালয়। তার জন্য প্রথমে জেলার ৯৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার স্কুলগুলিকে একে একে বেছে নেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন ফান্ডকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। বিদ্যালয়গুলিকে শহরের স্কুলের মতোই ঝাঁ চকচকে করে তোলা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ পড়ুয়াদেরও স্কুলে আসার আগ্রহ তৈরি করা। ‘জ্ঞানালয়’ কর্মসূচির আওতায় স্কুলের বহুতল, সীমানা প্রাচীর, সিঁড়িতে ইতিহাস, ভূগোল, অঙ্ক, বিজ্ঞানের জটিল বিষয়, রসায়নের সূত্র আঁকা হয়। লক্ষ্য ছিল যাতে স্কুলে এলেই পড়ুয়াদের সেসব অঙ্কন চোখে পড়ে এবং শেখার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা হয়। পড়ুয়াদের সিলেবাসের বাইরে কিছু সাধারণ জ্ঞানের ধারণা দিতেও একাধিক উপায় অবলম্বন করা হয়। কোনও স্কুলে ফুটিয়ে তোলা হয় কুলিক পক্ষীনিবাসের খণ্ডচিত্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয় স্মার্ট ক্লাস। যেখানে প্রজেক্টর, স্মার্ট টিভি ও ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে বসেই খুব সহজেই ই-লার্নিংয়ের সুযোগ পেতে শুরু করে পড়ুয়ারা।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, ২০১১ সালের একটি সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যের মধ্যে সাক্ষরতার হারে উত্তর দিনাজপুর জেলা অনেকটা পিছনের সারিতে ছিল। মাত্র ৬০.১৩ শতাংশ। যার জন্য স্কুলছুট কমাতে ও পড়ুয়াদের স্কুলের প্রতি আকর্ষণ ফেরানোর লক্ষ্যে এমন অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়। জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মীনা বলেন, গত বছর জ্ঞানালয় কর্মসূচী শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েত ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করা হয়। বোঝানো হয় পড়ুয়াদের স্কুলের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে কী কী করতে হবে। সেই অনুযায়ী আধিকারিক থেকে শুরু করে স্কুল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে স্কুলের দেওয়াল রঙিন করা, স্মার্টক্লাসের মাধ্যমে ই-লার্নিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথম ধাপে জ্ঞানালয় কর্মসূচির আওতায় দু’শোর বেশি স্কুলকে আনা হয়েছিল। সেই কাজের জন্যই স্কচ অ্যাওয়ার্ড মিলেছে। আগামীতে আরও দু’শোটি স্কুলকে একইভাবে সাজিয়ে তোলা হবে। নিজস্ব চিত্র।