• কুম্ভস্নান করতে গিয়ে প্রয়াগরাজে নির্মম অভিজ্ঞতা পূণ্যার্থীদের...
    আজকাল | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • মিল্টন সেন, হুগলি:‌ যাত্রী নিরাপত্তা অনেক দূরের কথা, রিজার্ভেশন থাকা সত্ত্বেও ট্রেনে উঠতে পারেননি বহু যাত্রী। ভিড় সামাল দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। দেখা মেলেনি রেল পুলিশ, টিটি বা রেলের কোনও আধিকারিকের। রেলের বিরুদ্ধে চরম অব্যবস্থার অভিযোগ। কুম্ভস্নান করতে প্রয়াগরাজে গিয়ে নির্মম অভিজ্ঞতা পূণ্যার্থীদের। রিজার্ভেশন টিকিট থাকা সত্ত্বেও ট্রেনে উঠতে পারেননি হাজার হাজার পূণ্যার্থী। বাধ্য হয়ে বহু টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি ফিরলেন শ্রীরামপুরের ২০ জন পর্যটক। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ট্রেন ধরে পরদিন অযোধ্যায় পৌঁছন শ্রীরামপুরের ২৯ জন পূণ্যার্থী। পর্যটকদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন প্রবীণ মহিলা।

    অযোধ্যা থেকে বেনারস কাশি বিশ্বনাথ ঘুরে গত ১৪ তারিখ তাঁরা প্রয়াগে মহাকুম্ভে পূন্যস্নান করেন। তাঁদের সকলের গত শনিবার ১৫ তারিখ বিকেল ৪ টে ১০ নাগাদ দুন এক্সপ্রেসের টিকিট ছিল। নির্ধারিত সেই ট্রেন প্রায় তিন ঘণ্টা পরে স্টেশনে ঢোকে সন্ধে সাতটায়। ট্রেন স্টেশনে এসে দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকে। ট্রেন ছাড়ে রাত ৯ টা নাগাদ। দুন এক্সপ্রেস স্টেশনে আড়াই ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকলেও সেই ট্রেনে উঠতে পারেননি তাঁরা। অনেক চেষ্টা করেও ট্রেনের কামরার সামনেই পৌঁছতে পারেননি একজনও। শ্রীরামপুর মরাদানের বাসিন্দা তরুণ কোলে জানিয়েছেন, তাঁর আত্মীয় বন্ধুদের পরিবার একসঙ্গে মাঝেমধ্যেই বেড়াতে গিয়ে থাকেন। এবারে কুম্ভে যাবেন ঠিক করেছিলেন। তাই দু’‌মাস আগেই ট্রেনে টিকিট কেটেছিলেন। দুন এক্সপ্রেসের স্লিপার ক্লাসে ২০ জনের রিজার্ভেশন টিকিট ছিল। বাকি ৯ পর্যটকদের রিজার্ভেশন ছিল এসিতে। ফেরার সময় এসিতে রিজার্ভেশন থাকা ৯ জন কোনওভাবে ট্রেনে উঠতে পারলেও বাকি ২০ জন ট্রেনে ওঠা তো দূরের কথা, কাছেও পৌঁছতে পারেননি। টানা আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। সারা রাত বেনারস স্টেশনে কাটিয়ে পরদিন আবার টিকিট কেটে কোনওভাবে কুম্ভ স্পেশাল ট্রেনে করে পন্ডিত দীন দয়াল উপাধ্যায় (‌মুঘলসরাই)‌ স্টেশনে পৌঁছন।

    আশা করেছিলেন সেখান থেকে যদি কোনও ট্রেন পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তিনি দেখেন অবস্থা আরও খারাপ। বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে খোঁজ নিয়েও লাভ হয়নি। বাস না পেয়ে অবশেষে একটি ইনোভা এবং দুটি বোলেরো গাড়ি ভাড়া করেন। তিনটি গাড়ির ভাড়া হয় ৭২ হাজার টাকা। সোমবার ভোরে সেই ভাড়া গাড়িতে তাঁরা বাড়ি ফেরেন। তরুণ বাবু আরও জানিয়েছেন, স্টেশনে বা ট্রেনে কোনও আরপি এফ নজরে পড়েনি। টিটি নেই, যাত্রীদের দুরবস্থা বা নিরাপত্তা দেখারও কেউ ছিল না। মানুষ মরল কি বাঁচল দেখার কেউ নেই। চরম অব্যবস্থার ছবি সর্বত্র। ট্রেনের টিকিট থাকা সত্ত্বেও ট্রেনে উঠতে পারেননি তাঁদের এক জনও। পর্যটক সুজাতা ঘোষাল বলেছেন, বাধ্য হয়ে তিনি হেঁটে ঘুরেছেন, তবু শান্তিতে ছিলেন। ট্রেনে ওঠার পর চরম কষ্ট! উপায় ছিল না, সহ্য করেছেন। এত টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে ফিরতে হবে, কখনও ভাবেননি। গত শনিবার দিল্লি স্টেশনে যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে পদপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১৮ জন পর্যটকের। ট্রেনে ফেরার চেষ্টা করলে তাঁদেরও এমনই অবস্থা হত বলে দাবি করেছেন শ্রীরামপুরের পর্যটকরা।

    ছবি:‌ পার্থ রাহা
  • Link to this news (আজকাল)