• কুম্ভে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, ধানবাদে মৃত্যু রাজ্যের ৬ পুণ্যার্থীর
    বর্তমান | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, গোঘাট ও গড়বেতা: কুম্ভে যাওয়ার পথে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু হল রাজ্যের ছয় বাসিন্দার। স্বজন হারিয়েছেন হুগলির গোঘাট ও পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার পরিবারগুলি। শুক্রবার রাতে রাজগঞ্জে দু’নম্বর জাতীয় সড়কে পথ দুর্ঘটনাটি ঘটে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ধানবাদের শহিদ নির্মল মাহাত মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও দু’জন। জখম আরও তিনজন এখন বিপন্মুক্ত। দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিজনকে গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে হতভাগ্য পরিবারগুলিকে সাহায্যের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  


    শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দু’টি গাড়িতে করে গোঘাটের সাতবেড়িয়া গ্রাম থেকে ১৮ জন কুম্ভযাত্রা করেছিলেন। রাত দেড়টা নাগাদ ধানবাদের রাজগঞ্জে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পিছনে পুণ্যার্থীদের একটি গাড়ি সরাসরি গিয়ে ধাক্কা মারে। তাতে গোঘাটের কামারপুকুর পঞ্চায়েতের সাতবেড়িয়ার বাসিন্দা পিয়ালি সাহা (৩৩) ও তাঁর বছর পাঁচেকের মেয়ে আগমনির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গড়বেতা থানার নলপা গ্রামের বাসিন্দা প্রণব সাহা (৪২), তাঁর স্ত্রী শ্যামলী সাহা (৩৪) ও তাঁদের চার বছরের মেয়ে অন্বেষার মৃত্যু হয়। শ্যামলী সম্পর্কে পিয়ালিদেবীর দিদি। দুর্ঘটনায় গাড়ির চালক গোঘাটের ভাদুরের বাসিন্দা শেখ রজব আলিরও (৩২) মৃত্যু হয়েছে। রাজগঞ্জ থানার ওসি আলিশা কুমারী বলেন, ‘পুণ্যার্থীদের গাড়িটি বাংলা থেকে প্রয়াগরাজ যাচ্ছিল। পথে সম্ভবত চালক তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তার জেরেই দুর্ঘটনা। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চারজনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পরে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’ 


    শুক্রবার গোঘাটের কামারপুকুরের অরূপ সাহা ও তাঁর ভাই স্বরূপ পরিবার নিয়ে যাচ্ছিলেন কুম্ভে। সাতবেড়িয়ার বাসিন্দা তাঁদের আত্মীয় ও একজন প্রতিবেশী সঙ্গে ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে গড়বেতার প্রণববাবুর পরিবারের চারজনও যান। স্বরূপবাবুর স্ত্রী পিয়ালিদেবী ও তাঁদের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিতে মোট ১১ জন ছিলেন। জখম প্রতিবেশী রাহুল রায় শনিবার ঝাড়খণ্ড থেকে ফোনে বলেন, ‘ওই রাতে ধানবাদ ঢোকার আগে খাওয়া দাওয়া করেছিলাম। তারপর ফের গাড়িতে উঠি। পিছনের সিটে তিনজন বসেছিলাম। মাঝপথে কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল জানি না। চোখের সামনে নিজেদের কাছের মানুষদের দেহ দেখে একেবারে ভেঙে পড়েছি।’ দুর্ঘটনার খবর এদিন ভোরে গোঘাটে পৌঁছয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন সাহা পরিবার সহ প্রতিবেশীরাও। শনিবার সাতবেড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিবেশ। শোকস্তব্ধ গ্রামবাসীরা জড়ো হয়েছেন অরূপবাবুর বাড়ির সামনে। পুণ্যের আশায় যাওয়া মানুষগুলোই যে আর ফিরবে না।
  • Link to this news (বর্তমান)