• ‘নিজের বাড়ি না থাকলে তাঁদের মরে যাওয়াই উচিত’,    মামির লাগাতার বিদ্রুপের জন্যই আত্মঘাতী কসবার পরিবার, প্রশ্ন
    বর্তমান | ০৬ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নাক-মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে কসবা হালতুর আড়াই বছরের শিশুপুত্রকে। তারপরই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন বাবা-মা সোমনাথ রায় ও সুমিত্রা রায়। তার আগে অবশ্য শিশু সন্তানের নিথর দেহটা বুকের কাছে কাপড়ে বেঁধে নিয়েছিলেন সোমনাথ। ময়না তদন্তের রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে পুলিস সূত্রে খবর। বুধবার আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ধৃত সোমনাথের মামা-মামিকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। সেখানে ধৃতদের আইনজীবীরা বলেন, মৃতার বোনের অভিযোগ, ঝগড়ার সময় একবার মামি বলেছিলেন, যাঁদের নিজেদের বাড়ি নেই, তাঁদের মরে যাওয়া উচিত। প্রশ্ন উঠছে, ক্রমাগত বিদ্রুপের জন্যই কি চরম পথ বেছে নেয় হালতুর এই পরিবার? আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে পুলিস। বিচারক দুই ধৃতকে ১২ মার্চ পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। 


    ময়না তদন্তের রিপোর্ট বলছে, আড়াই বছরের রুদ্রনীলের নাক ও ঠোঁটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শ্বাসরোধ করেই খুন হয়েছে। কিন্তু কে খুন করল? এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে পুলিস। বাবা সোমনাথ ও মা সুমিত্রার গলায় ফাঁসের জন্যই মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এদিন দুপুরের দিকে আলিপুর পুলিস আদালতে ধৃত প্রদীপ ঘোষাল ও নীলিমা ঘোষালকে (মামা-মামি) তোলা হয়। তাঁদের পক্ষে একাধিক আইনজীবী সওয়াল করেন। নীলিমা কলকাতা পুলিসে কর্মরত। তিনি আলিপুর আদালতেই পোস্টিং ছিলেন। বছর দু’য়েক আগে কলকাতা পুলিস থেকেই অবসর নিয়েছেন প্রদীপবাবু। আইনজীবীরা বলেন, এফআইআরে এমন কিছুই নেই যাতে ধৃতদের পুলিস হেফাজত নেওয়া যায়। তাছাড়া দুই পরিবারই আলাদা থাকে। অভিযোগ পত্রে দেখা যাচ্ছে, বাড়ির ট্যাক্সের বিল ওই মহিলার কাছে ছিল। তাই নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। তখনই মামি কথায় কথায় বলেন, যাঁদের নিজেদের বাড়ি নেই, তাঁদের মরে যাওয়াই উচিত। আইনজীবীরা বলেন, তাছাড়া আর কোনও সমস্যা নেই। এই ঝগড়া কবে হয়েছে, তারও উল্লেখ নেই। ধৃত নীলিমাদেবী ক্যান্সার আক্রান্ত। আগামী ৮ তারিখ তার কেমো নেওয়ার দিন। তিনি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বলেও জানান আইনজীবীরা। সোমনাথ-সুমিত্রার সন্তানের শারীরিক সমস্যার জন্য অস্ত্রোপচার হয়েছিল। সেই কারণে টাকা ধার করতে হয়েছিল সোমনাথকে। মানসিক অবসাদেও ভুগছিলেন তাঁরা। দেওয়ালে মামা-মামি ছাড়াও আরও তিন জনের নাম ছিল। আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন, পুলিস অস্বাভাবিক মৃত্যুর কোনও মামলা রুজু করেননি কেন? মক্কেলদের জামিন চান তাঁরা। অন্যদিকে, পুলিসের তরফে দু’জনেরই ১৪ দিনের পুলিস হেফাজতের আবেদন করা হয়। সরকারি কৌঁসুলি বলেন, ওঁরা দেওয়ালে নাম লিখে দিয়ে গিয়েছে। মারা যাওয়ার আগে মানুষ মিথ্যা বলবে না। সূত্রের খবর, ওই দেওয়ালে মামা-মামি ছাড়াও আর কাদের নাম ছিল, সেদিকটাও খতিয়ে দেখছে পুলিস। সবপক্ষের সওয়াল শুনে বিচারক ধৃতদের ১২ মার্চ পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি নীলিমাদেবীর চিকিত্সা সংক্রান্ত বিষয়গুলি যথাযথভাবে পালনের জন্য পুলিসকে নির্দেশ দেন বিচারক।
  • Link to this news (বর্তমান)