এই সময়,আলিপুরদুয়ার: লোকালয়ে হাতির উপদ্রব ঠেকাতে জঙ্গল লাগোয়া রাস্তায় তারের বেড়া লাগিয়েছে বন দপ্তর। সেই বেড়ার অংশ গলায় গেঁথে মৃত্যু হলো এক কলেজ পড়ুয়ার। বৃহস্পতিবার দুপুরে কাকার মোটরবাইক নিয়ে তীব্র গতিতে ছুটতে গিয়ে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের নাড়ারথলি বিটের জঙ্গলের পাশে হাতির হানা রুখতে বন দপ্তরের তৈরি করা ইলেকট্রিক ফেন্সিংয়ে ধাক্কা খেয়ে মৃত্যু হলো জিৎ ভট্টাচার্য (১৯) নামে এক যুবকের। মোটরবাইকে তাঁর সঙ্গে থাকা রাজদীপ দেবনাথ নামে এক যুবকও অল্প বিস্তর জখম হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে শামুকতলা ডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা জিৎ তাঁর কাকার মোটরবাইক নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ছিপড়া এলাকায় ক্রিকেট খেলা দেখতে গিয়েছিলেন। খেলা দেখে ফেরার পথেই দুর্ঘটনার মুখে পড়েন তিনি। নাড়ারথলি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রায় ফাঁকা পথে প্রচণ্ড গতিতে মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন জিৎ। ওই রাস্তার একপাশে হাতির হাত থেকে গ্রাম বাঁচাতে জিআই তারের ফেন্সিং লাগানো হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরবাইক নিয়ে ওই ফেন্সিংয়ে ধাক্কা মারেন যুবক। গলায় জিআই তার ঢুকে কেটে যায় জিতের গলার নলি। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। তড়িঘড়ি বন্ধুরা তাঁকে উদ্ধার করে কামাখ্যাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত যুবক বাবা–মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল। তিনি কামাখ্যাগুড়ি শহিদ ক্ষুদিরাম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মোটরবাইক নিয়ে যুবকদের প্রচণ্ড গতিতে দাপাদাপি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এর আগেও ওই এলাকায় একই ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও সে সময়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। মৃত ছাত্রের বন্ধু একই মোটরবাইকে সওয়ারি রাজদীপ বলেন, ‘বাইকের গতি অসম্ভব বেশি থাকায় জিৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তারের বেড়ার দিকে ছিটকে পড়ে। তাতে ওর গলায় তার গলায় গেঁথে যায়। আমি উল্টো দিকে ছিটকে পড়ায় বিশেষ আঘাত লাগেনি।’
মৃত কলেজ পড়ুয়ার মা সীমা ভট্টাচার্য কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ভাত বেড়ে ছিলাম। খেয়ে গেল না। কথা শুনল না। আমার সব শেষ হয়ে গেল। আর কেউ মা ডাকবে না আমাকে।’ বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প পূর্বের উপক্ষেত্র অধিকর্তা দেবাসিশ শর্মা বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তবে দুর্ঘটনাটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে বনদপ্তরের কিছু করার নেই।’ পুলিশ ওই কলেজ পড়ুয়ার মৃতদেহ শুক্রবার ময়না তদন্তের জন্যে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে পাঠাবে।