রাজ্যপালের কনভয় ঘিরে প্রবল বিক্ষোভ মুর্শিদাবাদে। একদিকে বিক্ষোভ, অন্যদিকে আতঙ্ক। দফায় দফায় রাজ্যপালের কনভয় আটকালেন স্থানীয়রা। গাড়ি ঘিরে ধরে জানালেন তাঁদের অভাব-অভিযোগ। তাঁদের দাবি, এলাকায় নিরাপত্তা নেই। স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প চাই। অন্যদিকে, বেতবোনে পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখালেন ক্ষতিগ্রস্তরা। সব মিলিয়ে শুক্রবার রাতের মালদার মতো শনিবারে ধুন্ধুমার বাধে ধুলিয়ান, বেতবোনে।
এ দিন সকালে মালদা থেকে মুর্শিদাবাদে যান রাজ্যপাল। তারপর সোজা পৌঁছে যান খুন হওয়া পরিবারে। ওই পরিবারের বাবা ও ছেলেকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যপালকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা রাজ্যপালকে বলেন, ‘ওরা বলেছে, এলাকায় থাকতে দেব না। ভয়ে রাতে ঘুমোতে পারছি না। এভাবে কতদিন চলবে জানি না।’ রাজ্যপাল আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘কোনও অসুবিধা হলে সরাসরি আমাকে ফোন করবেন।’
এখান থেকে বেরনোর পর ধুলিয়ানের ৫ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে যাওয়ার সময় রাজ্যপালের গাড়ি ঘিরে ধরেন স্থানীয়রা। রীতিমতো চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায। তাঁদের দাবি, রাজ্য়পালকে ধুলিয়ানেও যেতে হবে। পাশাপাশি, নিরাপত্তা চেয়ে সরব হন তাঁরা। এলাকায় স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্পের দাবিও তোলেন। সেই দাবিতে অনেকেরই হাতে ছিল পোস্টার, প্ল্য়াকার্ড। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডেও একই ছবি দেখা যায়। এখানেও রাজ্যপালের কনভয় আটকান স্থানীয়রা। দাবিও এক, তাঁদের এলাকা ঘুরে দেখতে হবে। গাড়ি থেকে নেমে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল। তার পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
শুক্রবার রাতে মালদার পাললালপুরে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্যাম্পে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করার দাবি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন স্থানীয়রা। সেই নিয়েও উত্তাল হয়ে উঠেছিল এলাকা। এই দিনও প্রায় একই ছবি দেখা গেল বেতবোনে। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন স্থানীয় মহিলারা। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। বাধা পেয়ে রাস্তাতেই বসে পড়েন তাঁরা। চলতে থাকে স্লোগান।
স্থানীয়রা জানান, তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যে কোনও দিন ফের এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তাঁদের নিরাপত্তা দিতে হবে। স্থানীয় ও ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্বস্ত করে রাজ্যপাল বলেন, ‘কোনও অসুবিধা হলে সরাসরি আমাকে ফোন করবেন।’ রাজভবনের পিস রুমের ফোন নম্বরও দিয়ে দেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘রাজ্য সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক। এলাকায় শান্তি ফেরানোই অগ্রাধিকার।’
প্রসঙ্গত, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে অশান্ত হয় মুর্শিদাবাদের জাফরাবাদ। গত শনিবার এক পরিবারের বাড়িতে চড়াও হয় কয়েকজন দুষ্কৃতী। বাবা এবং ছেলেকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। তপ্ত হয়ে ওঠে জাফরাবাদ। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশের বাহিনী। দেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।