এই সময়: অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায়, সেটা নিশ্চিত করার কথা পুলিশের। কিন্তু সেই পুলিশই কৌশল করে অপরাধীদের বাঁচাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ খোদ কলকাতা হাইকোর্টের। বৃহস্পতিবার একটি জনস্বার্থ মামলায় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালী চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ অভিযোগ দায়ের করলেও পার পেয়ে যাচ্ছে রাজনীতির ছাতার তলায় থাকা অভিযুক্তরা। হাইকোর্টের ওই পর্যবেক্ষণ পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে।
আউশগ্রাম থানার পুলিশ অফিসার অভিযোগপত্রে লিখেছেন, বেআইনি বালি খাদান চালানো, বেআইনি অস্ত্র রাখা, নির্দিষ্ট ওজনের চেয়ে বেশি ওজনের পণ্য ট্রাকের বহন করা, বোমা উদ্ধারের মতো ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু আদালতের পর্যবেক্ষণ, ওই অফিসার এমন কারসাজি করে অভিযোগপত্র লিখেছেন যে, তাতে অভিযুক্তদের নাম দেওয়া হয়নি।
আদালতের মতে, এটাই কৌশল। অথচ পুলিশ অফিসার জানেন যে, কার নামে ওই সব অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এখানেই হাইকোর্ট মনে করে যে, অপরাধীদের পুলিশ বাঁচাচ্ছে কৌশল করে। ‘ফলে, অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিষয়টি পুলিশের নজরে থাকলেও অপরাধীদের কোনও সাজা হচ্ছে না,’ এমনই মন্তব্য হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির।
আউশগ্রাম–২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শেখ আব্দুল লালনের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের একাংশের দীর্ঘদিনের অভিযোগ যে, তিনি বেআইনি ভাবে নদী থেকে বালি তুলে পাচার করেন। শুধু তা–ই নয়, লালনের বিরুদ্ধে জমি মাফিয়া ও জঙ্গল মাফিয়াদের মদত দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
সরকার তাঁকে পুলিশি নিরাপত্তা দিয়েছে, আবার তিনি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরেন এবং নাগরিকদের ভয় দেখান বলেও অভিযোগ। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হলেও আউশগ্রাম থানার অফিসার হাইকোর্টে জমা দেওয়া তাঁর রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত অন্তত পাঁচটি অভিযোগপত্রে অভিযুক্তকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গ্রামবাসীরা কিন্তু নির্দিষ্ট ভাবে শেখ লালনের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন।
উল্টে অভিযোগকারীদের তিন জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানানো হয়েছে হাইকোর্টে। এই সংক্রান্ত যাবতীয় নথি দেখে ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, ওই ধৃতদের অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশ— জেলা পুলিশের শীর্ষকর্তারা ওই ইনস্পেক্টরের লেখা অভিযোগের তালিকা নিয়ে তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট দেবেন।
এ দিন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আউশগ্রাম থানার ইনস্পেক্টর গত ১৬ এপ্রিল তাঁর রিপোর্টে অত্যন্ত সুচতুর ভাবে শাসকদলের প্রভাবশালী ওই নেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন।’ পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসককে এ দিন হাইকোর্টের নির্দেশ—শেখ লালনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁকেও রিপোর্ট দিতে হবে। তা ছাড়া, ভোটের সময়ে ওই ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিয়েছিলেন কি না, সেটাও হাইকোর্টে জানাতে হবে ডিএম–কে।