এই সময়, রিষড়া: জিটি রোডের ধারে বাঁশতলা থেকে কিছুটা এগলেই রিষড়া হরিসভা লাগোয়া একটা সরু গলির মধ্যে ছিমছাম দোতলা বাড়ি। এই বাড়িতেই থাকেন সদ্য পাকিস্তানের হাত থেকে ছাড়া পাওয়া বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউয়ের স্ত্রী, ছেলে এবং বাবা–মা।
বুধবার সকালে পূর্ণমের মুক্তির খবর চাউর হতেই সেই বাড়িতে ভিড় বাড়তে শুরু করে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, পাড়া প্রতিবেশী সবাই হাজির। প্রত্যেকেই ধন্যবাদ জানিয়ে গেলেন পূর্ণমের বাড়ির লোকেদের।
কেউ আবার বাড়ির লোকেদের মিষ্টি মুখ করাতে এসেছিলেন। সব মিলিয়ে এ দিন উৎসবের পরিবেশ ছিল সাউ বাড়িতে। লোকজনের ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছেন পূর্ণমের বাড়ির লোকেরা।
পাড়া প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, পূর্ণম সাউ দীর্ঘদিন ধরে বিএসএফে কাজ করলেও কেউ কোনও দিন তাঁর বাড়িতে খোঁজ নিতে আসেননি। নেতাদেরও কোনও দিন সে ভাবে চোখে পড়েনি। কিন্তু যেদিন থেকেই পূর্ণম পাকিস্তানি রেঞ্জারদের হাতে আটক হয়েছেন, তারপর থেকেই বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা লেগেই রয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের লোকেরাও রোজ ভিড় করছেন। তবে এ দিন সবথেকে রেকর্ড ভিড় হয়েছে। হঠাৎ বাড়িতে প্রচুর লোকজন চলে আসায় পরিবারের লোকজন কিছুটা অসুবিধা পড়লেও তাঁরা হাসি মুখেই সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। সংবাদমাধ্যমেরও আব্দার মিটিয়েছেন।
এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ পূর্ণমের বাড়িতে যান রিষড়ার পুরপ্রধান বিজয় সাগর মিশ্র। সঙ্গে ছিলেন রিষড়ার উপ–পুরপ্রধান জাহিদ হাসান খান, কাউন্সিলার সুখসাগর মিশ্র, কৌশিক মুখোপাধ্যায় ও মনোজ সাউরা। দুপুরের দিকে বিজেপি নেতা প্রণয় রায় এসে পূর্ণমের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে যান। দুপুর দুটো নাগাদ পূর্ণমের বাড়িতে আসেন শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের সভাপতি অরিন্দম গুঁই, তৃণমূলের যুব সভাপতি শুভদীপ মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন কাউন্সিলার বাবু সরকার।
পূর্ণমের বাড়ি থেকে বেরিয়ে কয়েক জন তৃণমূল নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করতেও দেখা যায়। তাঁদের দাবি, পূর্ণম পাকিস্তানি রেঞ্জারদের হাতে আটক হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই সাউ পরিবারের পাশে ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী দফায় দফায় পূর্ণমের স্ত্রী রজনীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তাঁরা।
রাতে পূর্ণমের বাড়িতে আসেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি’র প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং। শুভেন্দু অধিকারী গোটা পরিবারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়।’
পূর্ণম পাকিস্তানের হাতে বন্দি হওয়ার পর থেকেই অবশ্য বিভিন্ন দলের নেতারা সাউ বাড়িতে এসে সমবেদনা জানিয়ে গিয়েছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক সুদীপ্ত রায় ও বিবেক গুপ্তা। এ দিন পূর্ণমের পরিবার জানিয়েছে, গোটা দেশ তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোয় তাঁরা কৃতজ্ঞ।