• বকেয়া DA-র ৫০% দিয়ে দিন: সুপ্রিম-পরামর্শ
    এই সময় | ১৫ মে ২০২৫
  • এই সময়, নয়াদিল্লি: রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংশোধিত হারে বকেয়া ডিএ সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীনই বকেয়ার অন্তত ৫০ শতাংশ টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিল সুপ্রিম কোর্ট।

    বুধবার বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে মামলার শুনানি চলাকালীন এই পরামর্শ দেয় আদালত। এতে রাজ্য সরকারের উপরে চাপ যে বেশ খানিকটা বাড়ল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই বলে মনে করছেন আইনজ্ঞদের একাংশ।

    রাজ্য সরকারের তরফে বর্ষীয়ান কৌঁসুলি অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এ দিন অনুপস্থিত থাকায় তাঁর বদলে রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী হুজ়েফা আহমেদি। এ দিন মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়নি। ফলে এ দিন ধরলে শীর্ষ কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি অন্তত ১৮ বার পিছিয়ে গেল বলে মত আইনজীবীদের।

    এ দিন শীর্ষ আদালতে মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে বিচারপতি কারোলের পর্যবেক্ষণ— ‘আপনারা বকেয়া ডিএ–র অন্তত ৫০ শতাংশ রিলিজ় করুন।’ তখন আহমেদি যুক্তি দেন, ‘রাজ্য সরকারের উপরে বিরাট আর্থিক বোঝা থাকার পরেও আমরা কর্মীদের জন্য ডিএ রিলিজ় করেছি। তারপরেও রাজ্য সরকারের কর্মীরা সেন্ট্রাল পে কমিশনের সমতুল হারে ডিএ-র দাবি জানাচ্ছেন। এটা দেওয়া সম্ভব নয়৷ রাজ্যের জন্য এটা বিরাট বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।’

    আদালত যে আহমেদির এই যুক্তিতে যে সন্তুষ্ট নয়, তা বুঝিয়ে দিয়ে তখন বিচারপতি কারোল বলেন, ‘আপনারা একটা কাজ করুন৷ আরও বেশি ডিএ দিয়ে দিন৷’ যদিও পরামর্শের সুরে রাজ্যকে এ কথা বললেও আদালত এ দিন কোনও লিখিত নির্দেশ দেয়নি। তবে বিচারপতি কারোলের পর্যবেক্ষণের সূত্রেই মামলাকারীদের তরফে অন্যতম আইনজীবী পিএস পাটোয়ালিয়া অভিযোগ করেন, ‘রাজ্য সরকার তার কর্মীদের ন্যায্য প্রাপ্য ডিএ দিচ্ছে না।’

    রাজ্য ইচ্ছাকৃত ভাবে এই মামলার শুনানি পিছিয়ে দিতে চাইছে, অভিযোগ করেন মামলাকারীদের তরফে আর এক বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য৷ সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতি কারোল জানান, আগামী শুক্রবার, ১৬ মে তাঁরা এই মামলার শুনানি করবেন। সে দিন রাজ্য সরকারের তরফে সওয়াল করার জন্য সিঙ্ঘভি উপস্থিত না-থাকলে তাঁর পরিবর্তে সওয়াল করতে হবে আইনজীবী আহমেদিকেই।

    দেশের শীর্ষ আদালতের এ দিনের কড়া অবস্থানে খুশি সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারী রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। মামলাকারী ‘কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এপ্লয়িজ়’-র সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা ডিএ মামলার ফয়সালা চাই। দিনের পর দিন রাজ্য মামলার শুনানি পিছিয়ে দেবে, এটা বরদাস্ত করা যায় না। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা এই মুহূর্তে ১৮ শতাংশ ডিএ পান৷ বাকি আছে ৩৭ শতাংশ৷ ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী এই টাকা আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য।’

    একই সুর সংগঠনের সভাপতি শ্যামলকুমার মিত্রর গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের এ দিনের কড়া অবস্থান আমাদের আশাবাদী করছে।’

    উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের মহার্ঘ ভাতার সমান হারে ডিএ দেওয়ার পাশাপাশি বকেয়া ডিএ প্রদানের দাবি জানিয়ে রাজ্য সরকারের কর্মীদের একাংশ কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। কলকাতা হাইকোর্ট ২০২০-এর ২০ মে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়, কেন্দ্রীয় সরকারের সমান হারে রাজ্য সরকারের কর্মীদেরও ডিএ দিতে হবে।

    হাইকোর্টের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা মামলা করে রাজ্য। ২০২২-এর ৩ নভেম্বর দায়ের হয় মামলা। প্রথম শুনানি হয় ২০২২-এর ২৮ নভেম্বর। এর পরে বারবার ডিএ মামলার শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে বিভিন্ন কারণে। কখনও রাজ্য সরকারের আইনজীবীর সমস্যা, কখনও বিচারপতিদের অনুপস্থিতির জন্য বারবারই ‘তারিখ পে তারিখ’ পর্যায়ে চলে গিয়েছে ডিএ মামলার সুপ্রিম শুনানি।

    এরই মাঝে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি কর্মচারীদের জন্য কয়েক দফায় বাড়তি ডিএ-র ঘোষণা করেন। তারপরেও কেন্দ্রীয় হারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দেওয়া মহার্ঘ ভাতার হারের পার্থক্য থেকে গেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের শীর্ষ আদালত শুক্রবার কী অবস্থান গ্রহণ করে, সে দিকেই এখন তাকিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের একটা বড় অংশ।

  • Link to this news (এই সময়)