জলে ভাসমান লাশ, পুলিস ওঠাতেই সব ফাঁস! বিশ্বভারতীর লালবাঁধ থেকে উদ্ধার হওয়া ‘মৃত’ যুবক আসলে মদ্যপ
বর্তমান | ১৫ মে ২০২৫
ইন্দ্রজিৎ রায়, বোলপুর: পান থেকে চুন খসলেই বিশ্বভারতীতে শোরগোল পড়ে যায়! বুধবার সকালে বিশ্বভারতীর জলাশয় লালবাঁধে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, এমন খবর জানাজানি হতেই ক্যাম্পাসে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। জানতে পেরে কর্তৃপক্ষ, নিরাপত্তা কর্মী, আধিকারিকদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়ে। এরপরেই লালবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় মানুষের ভিড় জমতে শুরু করে। পুলিস থেকে সাংবাদিক সকলেই হাজির। দেখা যায়, ঘণ্টাখানেক ধরে জলে একটি নিথর দেহ ভাসছে। দেহটি কার? কোথা থেকে এল? খুন, নাকি আত্মহত্যা? স্থানীয়দের মধ্যে শুরু হয় গুঞ্জন। এরপরেই সেই দেহ তোলার উদ্যোগ নেয় পুলিস। স্থানীয়দের সহায়তায় নিথর ওই দেহ ডাঙায় তোলা হয়। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু তারপরেই সবাই চমকে যান। হঠাৎই মড়াটা যেন নড়ে উঠল! ‘আরে এ-তো বেঁচে আছে’ বলে সবাই চিৎকার শুরু করেন। সকলেরই চক্ষু চড়কগাছ। উঠে পড়েন ওই যুবক। নেশার ঘোরে কার্যত টলমল অবস্থা। এরপরই বেহুঁশ ওই যুবকের কাণ্ডকারখানায় পুলিস ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে শুরু হয় হাসির রোল।
স্থানীয় পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবকের বাড়ি শান্তিনিকেতন থানার বাগানপাড়ায়। মঙ্গলবার ছিল আদিবাসীদের বিশেষ পরব। সেই উপলক্ষ্যে ওইদিন সন্ধ্যা থেকেই মদের নেশায় ডুব দেন ওই যুবক। বুধবার সকালে ভ্যাপসা গরমে থাকতে না পেরে সটান তিনি শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবন সংলগ্ন লালবাঁধে হাজির হন। গরমে স্বস্তি পেতে শুধুমাত্র মুখটুকু বের করে গোটা শরীর জলের মধ্যে ভাসিয়ে রাখেন। নেশায় বুঁদ থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিথর অবস্থায় জলে পড়েছিলেন ওই যুবক। বেলা বাড়তেই স্থানীয় বাসিন্দারা লালবাঁধের জলে তাঁকে ভেসে থাকতে দেখেন। মৃত মনে করে মুহূর্তেই সে খবর ক্যাম্পাস ও এলাকাবাসী মানুষজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মৃতদেহটি কার জানতে লালবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় ভিড় জমে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে শান্তিনিকেতন থানার পুলিসও উপস্থিত হয়। জল থেকে দেহ তোলার পরেই ঘটে এক অভাবনীয় ঘটনা। আচমকা উঠে বসেন ওই যুবক। আর তাতেই সকলের চোখ কপালে ওঠে। তিনি বেঁচে আছেন দেখে সকলে আশ্বস্ত হন। তবে যুবকের চালচলন দেখেই স্থানীয়রা বুঝতে পারেন, তিনি প্রবল নেশায় আচ্ছন্ন। বেহুঁশ যুবকের অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা দেখে পুলিস এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র হাসির রোল পড়ে যায়। অপ্রত্যাশিত এই ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বভারতীর গম্ভীর পরিবেশকে লঘু করে তোলে। তবে, এই ঘটনায় লালবাঁধে নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সুস্থ করার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিসের এক আধিকারিক। জলে নিথর যুবক (বাঁদিকে)। ডাঙায় পুলিসের ঘোরাটোপে (ডানদিকে)। নিজস্ব চিত্র