এই সময়: ২০২৪–এর তুলনায় ২০২৫–এর গ্রীষ্ম এখনও পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় কাটছে বাংলার। আলিপুর হাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী ২০২৪–এর এপ্রিল থেকে বাংলায় যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছিল, তার জের চলেছিল টানা ২২ দিন।
সেই তুলনায় ২০২৫ অনেকটাই ‘ঠান্ডা’। কিন্তু বাংলা এখনও পর্যন্ত যে আবহাওয়া পেয়ে চলেছে, সেটা সারা পৃথিবীর জন্য প্রযোজ্য নয়। ইউরোপিয়ান এজেন্সির আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষণা সংস্থা কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সি–থ্রিএস) ২০২৫–এর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সারা পৃথিবীর পরিস্থিতি কেমন ছিল, সে বিষয়ে যে তথ্য প্রকাশ করেছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
সংস্থা জানাচ্ছে, ২০২৫–এর প্রথম চার মাসের গড় তাপমাত্রা মানব ইতিহাসের উষ্ণতম। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চ ইতিহাসের উষ্ণতমর তকমা পেয়েছে এবং এপ্রিল ইতিহাসের দ্বিতীয় উষ্ণতম এপ্রিল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
পাঁচ মাস আগে শেষ হওয়া ২০২৪–কে ইতিমধ্যেই মানব ইতিহাসের উষ্ণতম বছর বলে চিহ্নিত করেছেন আবহবিদ ও পরিবেশবিজ্ঞানীরা। ২০২৫ শুরু হওয়ার সময়েই পূর্বাভাস ছিল এই বছর ইতিহাসের উষ্ণতম তিনটি বছরের অন্যতম হতে চলেছে।
বছরের প্রথম চার মাস শেষ হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, সেই পূর্বাভাসই মিলতে চলেছে। সি–থ্রিএস–এর গবেষকরা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, তাতে দেখা গিয়েছে এপ্রিলে পৃথিবীতে ভূপৃষ্ঠ–সংলগ্ন বাতাসের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৪.৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৯৯১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৩০ বছরের সময়সীমায় এপ্রিলে ভূপৃষ্ঠ–সংলগ্ন বাতাসের গড় তাপমাত্রা এর চেয়ে ০.৬০ ডিগ্রি ছিল কম। পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আবহাওয়া–সংক্রান্ত তথ্য বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সংগ্রহ করা শুরু হয়েছিল ১৮৫০ সাল থেকে। পরের ৫০ বছরের অর্থাৎ ১৮৫০–১৯০০ পর্যন্ত সময়ে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার চেয়ে ২০২৪–এর মে থেকে ২০২৫–এর এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের গড় তাপমাত্রা ১.৫৮ ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট–এর (ইসিএমডব্লুএফ) জলবায়ুবিজ্ঞানী সামান্থা বার্জেস সদ্য পার হওয়া এপ্রিল সম্পর্কে বলেন, ‘২০২৫–এর এপ্রিল ইতিহাসের দ্বিতীয় উষ্ণতম এপ্রিল হওয়ার পাশাপাশি অন্য একটি প্রবণতাও দেখিয়েছে। কয়েক মাস আগে থেকেই আমরা দেখছি শিল্প বিপ্লবের আগে অর্থাৎ ১৮৫০ নাগাদ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যত ছিল তার চেয়ে গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি উপরে রয়েছে। এই এপ্রিলও তার ব্যতিক্রম নয়। এত চেষ্টার পরেও গড় তাপমাত্রা নামানো যাচ্ছে না — এটার খুবই চিন্তার।’
সি–থ্রিএস জানাচ্ছে, ২০২৫–এর প্রথম চার মাসে গরমের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি টের পেয়েছে ইউরোপ, মধ্য এশিয়া, রাশিয়া, উত্তর আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া। এই চার মাসে সমুদ্রের উপরিতলের গড় তাপমাত্রা ছিল ২০.৮৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস — ২০২৪–এর চেয়ে (২০.৯২) খুব সামান্যই কম।
আবহবিদরা জানাচ্ছেন, সমুদ্রের উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে অনেক জায়গার তাপমাত্রাই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়েছে। এই উষ্ণ স্রোতই উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বরফ গলার হার বাড়িয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।