রাকিব ইকবাল, উলুবেড়িয়া
ক্যান্সারের ব্যয়বহুল চিকিৎসাব্যবস্থাকে দরিদ্র মানুষের হাতের নাগালে আনতে নিরলস গবেষণা করছেন সাঁকরাইলের চক শ্রীকৃষ্ণ গ্রামের বাসিন্দা, তরুণ গবেষক আফতাব উদ্দিন মোল্লা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ক্যান্সার নিয়ে নিরলস গবেষণা চালাচ্ছেন তিনি। তাঁর এই গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি সম্প্রতি তাঁকে ম্যাকডোনাল্ড ডিভিশনাল অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করল।
আফতাব উদ্দিন মোল্লা ছাড়াও এই অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন কলকাতার বাসিন্দা গৌরব আচার্য। বিজ্ঞানের জগতে বাঙালির গৌরবময় সংযোজন রাজ্যের প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন দুই গবেষক আফতাব উদ্দিন মোল্লা এবং গৌরব আচার্যের ম্যাকডোনাল্ড ডিভিশনাল অ্যাওয়ার্ড অর্জন। তাঁদের এই পুরস্কারপ্রাপ্তি দেশের মুখ উজ্জ্বল করল।
ম্যাকডোনাল্ড ডিভিশনাল অ্যাওয়ার্ড প্রসঙ্গে আফতাব উদ্দিন মোল্লা জানান, পুরস্কারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও জীব–রসায়ন বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতি বছর সেই সব গবেষকদের প্রদান করা হয়, যাঁরা তাঁদের নিজেদের বিভাগে অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে ও গবেষণায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
আফতাব উদ্দিন মোল্লা কেন্ট স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ডিভিশন থেকে এই পুরস্কার অর্জন করেছেন। হাওড়ার সাঁকরাইলের চক শ্রীকৃষ্ণ গ্রামের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আফতাব ছেলেবেলা থেকে পড়াশোনায় মেধার পরিচয় দিয়েছেন।
রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে পরবর্তী সময়ে আইআইটি পাটনা থেকে আফতাব স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহায়ো থেকে ফোনে আফতাব বলেন, ‘বর্তমানে আমি ডক্টর সঞ্জয় আবে-র তত্ত্বাবধানে পিএইডি করছি। আমার গবেষণার মূল বিষয় আরএনএ-প্রোটিন ইন্টারাকশন। এই গবেষণার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের জন্য সাশ্রয়ী ক্যান্সার চিকিৎসা উদ্ভাবনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
এ ছাড়াও নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের অজানা কারণ উন্মোচনেও কাজ করছেন আফতাব।
মৃদুভাষী আফতাব উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘প্রত্যেক বৈজ্ঞানিক সাফল্যের পিছনে কেউ না কেউ থাকেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আমার গবেষণার ক্ষেত্রে সব সময়ে পাশে রয়েছে। আমার গবেষণার মূল লক্ষ্য, ক্যান্সার চিকিৎসার খরচ কী ভাবে দরিদ্র মানুষের আয়ত্তের মধ্যে আনা যায়।’
আফতাবের পাশাপাশি, এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন আর এক বাঙালি সন্তান গৌরব আচার্য। গৌরব অর্গানিক ডিভিশন থেকে এই সম্মান অর্জন করেছেন। টরস্টেন হেগম্যানের তত্ত্বাবধানে অর্গানিক সিন্থেসিস এবং লিকুইড ক্রিস্টালের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ নিয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাকডোনাল্ড ডিভিশনাল অ্যাওয়ার্ড আফতাব উদ্দিন মোল্লা ও গৌরব আচার্যের হাতে তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও জীব–রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ক্রিস্টোফার ফেনক।
আফতাব ও গৌরবের এই সাফল্য শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত কৃতিত্ব নয়, বরং বাঙালি ও ভারতীয় বৈজ্ঞানিক সমাজের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত। এই দুই বাঙালির যাত্রা প্রমাণ করে, বিজ্ঞান চর্চা ও মানবসেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে গেলে, বিশ্বমঞ্চে প্রতিভার স্বীকৃতি নিশ্চিত মিলবে। ছেলের সাফল্যে খুশি আফতাব উদ্দিনের পরিবার। বাবা বাহাউদ্দিন মোল্লা বাহাউদ্দিন বলেন, ‘ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে বহু পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।আফতাবের গবেষণা দেশের কাজে লাগুক, এটাই আমাদের কাম্য।’