প্রবীর কুণ্ডু, শীতলখুচি
আর যাব না কাঁটাতারের ও পারে নিজের জমিতে। জমির ধান তাতে যদি নষ্ট হয় হোক। ওখানে গেলে ফের যদি আমায় তুলে নিয়ে চলে যায়। বাংলাদেশ থেকে মুক্তি পেয়ে নিজের বাড়ির উঠোনে বসে চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে এ কথা বলেন উকিল বর্মন।
বুধবার মধ্যরাতে বাড়ি ফেরেন তিনি। প্রায় মাসখানেক বাংলাদেশের লালমনিরহাট সংশোধনাগারে কেটেছে তাঁর। বাড়ি ফিরেও সেই দুঃস্বপ্ন তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
উকিলের ছেলে পরিতোষ বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, কাঁটাতারের ও পারে আমরা আর চাষ করতে যাব না । তার বদলে এ পারে জমির পাট্টা দেওয়া হোক।’ একই কথা স্ত্রী শোভার মুখেও।
তিনি বলেন, ‘আর কখনওই ও পারে জমিতে কাজে যেতে দেব না। তাতে যদি আধপেটা খেয়ে থাকতে হয় তা–ও থাকব। জীবনটা তো বাঁচুক।’ বৃহস্পতিবার শীতলখুচি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় উকিলের। শীতলখুচি থানাতেও পুলিশ তাঁকে ডেকে নিয়ে একাধিক বিষয়ে খোঁজ নেয়।
এ দিন সকাল থেকেই তাঁর বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয় পরিজন, গ্রামবাসী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা। কার কৃতিত্বে ফিরে এসেছেন শীতলখুচির এই অপহৃত কৃষক, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। বুধবার রাতেই পুলিশ, বিএসএফের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক (হিপ্পি)।
বৃহস্পতিবার উকিলের হাতে ফুল মিষ্টি ও মদনমোহন ঠাকুরের ছবি তুলে দেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ ও উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে আমি ঘটনার কথা জানানোর পরে উকিলকে ফেরাতে তৎপর হন তিনি।’
সাংসদ জগদীশ বর্মা বসুনিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার বদলের পরে ভারত–বিরোধী মানসিকতার জন্য উকিলের মতো নিরীহ কৃষককে এতদিন বাংলাদেশের জেলে বন্দি থাকতে হল।’
এ দিকে বিজেপি শিবিরের দাবি, প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএসএফের জন্য উকিল বাড়ি ফিরেছেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ছবি পোস্ট করে লেখেন, কেন্দ্রীয় সরকার ও বিএসএফের যৌথ উদ্যোগে উকিল বর্মন নিরাপদে দেশে ফিরেছেন।
বিজেপি বিধায়ক মালতী রাভা রায় বলেন, ‘উকিল বাড়ি ফেরায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিএসএফকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’ বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজ বলেন, ‘উকিলকে দেশে ফেরাতে কেন্দ্র সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। অবশেষে রাজবংশী কৃষক বাড়ি ফিরেছেন এটা আনন্দের।’